কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দগ্ধ ৬, একজনের মৃত্যু

কাট্টলীতে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে দুর্ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাপসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একটি বেডে শুয়ে আছে নয় বছরের শিশু মাহিয়া শেখ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, যন্ত্রণায় কাতর মাহিয়া কিছুক্ষণ পর পর ‘মা মা’ বলে ডাকছিল। কিন্তু সন্তানের ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন না মা সাজেদা বেগম (৪৫)। কারণ, তিনিও মাহিয়ার সামনের একটি বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার পুরো শরীরে ছিল ব্যান্ডেজ। কিছুক্ষণ পর পর গোঙাচ্ছিলেন তিনি।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী কমিউনিটি সেন্টার রোডে মরিয়ম ভিলার ষষ্ঠ তলায় গ্যাসের চুলা থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয় মাহিয়া ও তার মা। এ ঘটনায় মাহিয়ার ভাই শাহজাহান শেখ (২৫), তার স্ত্রী দিলরুবা বেগম (১৮), মো. স্বাধীন শেখ (১৭) ও মো. জীবন শেখ (১৪) দগ্ধ হন। অর্থাৎ একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন এ ঘটনায়। এর মধ্যে দিলরুবা ছাড়া সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় মারা গেছেন সাজেদা বেগম।
নিহত সাজেদা বেগমের স্বামী ও আহতদের পিতা জামাল শেখ জামালপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা। কাট্টলীর হাক্কানি আয়রন মার্টের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। পরিবার নিয়ে চার মাস আগে মরিয়ম ভিলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন। ঘটনার সময় কর্মস্থলে ছিলেন তিনি। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, সাজেদা বেগমের শ্বাসনালীসহ ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের শ্বাসনালী ও মুখ পুড়ে গেছে। স্বাধীনের ৪২ শতাংশ, জীবনের ৪০ শতাংশ, মাহিয়ার ৩৫ শতাংশ এবং দিলরুবার শরীরের ৭ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত : পুলিশ ও হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, রাতের খাবার খেয়ে সবাই যখন ঘুমাতে যাচ্ছিলেন তখনই আগুনের সূত্রপাত হয়। মাহিয়া মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটের সুইচে চাপ দিতেই বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই প্রতিটি কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দগ্ধ হন ৬ জন। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকায় পুরো ঘর গ্যাসে ভরে গিয়েছিল। পরে মশা মারার ব্যাট থেকে স্পার্ক করে আগুন লেগে যায়। এ সময় ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ ছিল।
বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এগিয়ে আসেন ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এবং আশেপাশের লোকজন। তারাই আগুন নিভিয়ে ফেলে সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসও আগুন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁঁছে। ঘটনার পর পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, যে ফ্ল্যাটে আগুন লাগে তার প্রতিটি কক্ষের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গেছে। জানালা এবং দরজাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি কক্ষের খাট দেখা গেছে। খাটের বিছানায় ছিল পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন। বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া কাপড়ের টুকরো।
আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন আজাদীকে বলেন, ঘটনাস্থলে গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি আছে। সেখান থেকে নির্গত গ্যাস জমে দাহ্য কিছুর সংস্পর্শে আসার ফলে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, ওই বাসায় গ্যাসের চুলায় লিকেজ ছিল। সেখান থেকে সম্ভবত গ্যাস জমেছিল। রাতে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট চালু করতেই সেখানে আগুন লেগে যায়।
ফায়ার স্টেশনের কন্ট্রোল রুমের অপারেটর আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার এনামুল হকের বরাতে জানান, রাতেই আমাদের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে আগেই এলাকাবাসী আগুন নিভিয়ে ফেলে।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক আজাদীকে বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কাট্টলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত ছয়জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের বার্ন ইউনিটে ভর্তি দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআর কী চায় বিএনপি?
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬