ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার

| রবিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার ওপর সরকার গুরুত্বারোপ করে চলেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হচ্ছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এটি সমৃদ্ধ হলে অর্থনীতি টেকসই হবে এবং দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। তবেই বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় হবে। তাঁরা সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ২০৪১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন এবং আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার উপর গুরুত্ব দিয়ে বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে এসএমই উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সহযোগিতা করার আহবান জানান।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, নিম্নবিত্তকে মধ্যবিত্তের বলয়ে আনতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশ ভাবনা। এসএমই সেক্টরের প্রধান কাজই হচ্ছে দরিদ্রদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আনার প্রয়াস। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে কর্মউদ্যোগী ও সৃজনশীল তৎপরতায় শামিল করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগে তাদের অন্তর্ভুক্তকরণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল সব দেশেই সনাতন ব্যাংকিং পদ্ধতি এখনো ‘যার টাকা আছে তাকেই টাকা দেওয়া’র নীতিতে পরিচালিত হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ধ্রুপদী লক্ষ্যমাত্রাই হচ্ছে যেন যার দরকার নেই তাকে টাকা কর্জ দাও। বেশির ভাগ দরিদ্রের টাকার বা পুঁজির প্রয়োজন অথচ তাকে সহজ শর্তে টাকা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সামপ্রতিককালে ‘অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উন্নয়ন’ একটি নতুন ধারণা হিসেবে এলেও এটা যে অর্থায়ন বা ব্যাকিং পদ্ধতির মাধ্যমে করা হবে সেটা অত্যন্ত পুরনো। পুঁজি ও ভোগবাদী আদর্শের দ্বারা লালিত বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুপরিকল্পিতভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে নয়, ‘উচ্চবিত্তকে অর্থায়নের ব্যাপারেই’ আগ্রহী। এমতাবস্থায় এই অর্থনীতির স্বতঃসিদ্ধ স্বভাব আর অশুভ সংঘবদ্ধতার (সিন্ডিকেট) বলয় থেকে নিম্নবিত্তকে মধ্যবিত্তে বিচরণ বিহারের সুযোগকে কিভাবে বাঙ্‌ময় করা যাবে তা ভাবার বিষয় বৈকি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ এসএমই খাত থেকে অর্জিত এবং মোট শ্রমশক্তির ২৫ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এই খাত থেকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারীপুরুষের সমতা বিধান ও নারী ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) খাতের ভূমিকা অসীম।

সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প কারখানা রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রতি বছরে টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি। এসব শিল্প কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩৫ লাখ কর্মীসহ দেড় কোটি মানুষের জীবনজীবিকা ও ভাগ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোক্তরা নিত্যনতুন পণ্য উৎপাদন করে করে চলছেন। সীমিত পুঁজির খুদে শিল্প মালিক আর অভাবনীয় মেধার দক্ষ কারিগররা মিলে হালকা ও মাঝারি শিল্পকে পরিণত করেছেন দেশের সম্ভাবনার আলোকবর্তিকায়।

এখানে উল্লেখের দাবি রাখে যে, দেশের ৯৬ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। কৃষি খাতের বাইরের খাতগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানই হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। দেশের ৩৫ লাখেরও বেশি শ্রমিক এ খাতে জড়িত। বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে অনেক নারীই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক দক্ষতার গুণে অল্পদিনেই তারা সফল হয়েছেন। তাদের ওই সফলতার খবর পেয়ে সফল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনেককে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঘোষণাও করে। এমন অসংখ্য জয়িতা দেশের অর্থনীতির ভিতটিকে শক্তিশালী করেছেন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২৩ লাখেরও বেশি।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যত রকমের প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব, তা প্রদান করা জরুরি। কেননা, শিল্পোন্নত দেশের প্রাণবায়ু হচ্ছে সে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে