কোভিড-১৯ : কৌশল পরিবর্তন করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে

| বুধবার , ১৪ জুলাই, ২০২১ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় মহামারী পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে সংবাদ প্রকাশ করছে নিয়মিত। গত ১২ জুলাই প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, লকডাউনেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মহামারী পরিস্থিতি করুণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১০ দিনে প্রায় এক লাখ কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড গড়ার প্রেক্ষাপটে অধিদপ্তর বলছে, এই ধারা চলতে থাকলে এক সপ্তাহ পর আর কোনো আইসিইউ ফাঁকা পাওয়া যাবে না। যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোনো আইসিইউ খালি দেখাবে না। এমন সময়ে চলমান লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা এলো।
করোনাভাইরাস মহামারীর বছর গড়ানোর পর বাংলাদেশ যখন সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা মোকাবেলা করছে, তখন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গতবারের মতো চলমান লকডাউন ‘শর্তসাপেক্ষে’ শিথিল করার ঘোষণা এসেছে। সোমবার সরকারের তথ্যবিবরণীতে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ থাকা যাত্রীবাহী ট্রেন ১৫ জুলাই চালু এবং ১৭ জুলাই কোরবানির পশুর হাট বসানোর ঘোষণা এসেছে। এখানে উল্লেখ্য, গত বছর কোরবানির ঈদের আগে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যে বিধিনিষেধ করা হলে ঈদের পর পরে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতির জন্য প্রধানত মানুষের চলাচলকেই দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তার সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বিধি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা তো ছিলই। এবার পরিস্থিতি গত বারের চেয়ে বহু বহু গুণ অবনতি হয়েছে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সবাই বাইরে বের হতে চায়। এরই মাঝে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা ছিল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেও বাজারে অতিরিক্ত মানুষ গেলে সংক্রমণ কি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না? স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন উপাসনালয়সহ নানা জায়গায় সবাই যাচ্ছেন এই লকডাউনে। গত বছর কিন্তু কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া ছিল এক্ষেত্রে। এবার করোনার ভয়াবহতা যখন প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে, তখন এক্ষেত্রে শিথিলতা যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। বিভিন্ন গার্মেন্ট, কলকারখানা, ব্যাংক, অফিস খোলা থাকায় সংক্রমণ কি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে কমানো সম্ভব? এসব বিবেচনায় অন্য দেশে সম্ভব কিনা জানি না, বাংলাদেশে শতভাগ লকডাউন পালন সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। তবে গণপরিবহণ বা গণজমায়েত হয় এমন অনুষ্ঠান বন্ধ এবং বেশিরভাগ মানুষকে দুই সপ্তাহ ঘরবন্দি করে রাখলে হয়তো সংক্রমণ কমানোর সুফল পাওয়া যেতে পারে-এমন ভাবনা ভাবছে নীতিনির্ধারক মহল। তাঁরা ঈদুল আযহার পর আবার কঠোর লকডাউন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু এই লকডাউন যেন তামাসায় পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে যেন স্ববিরোধী কোনো বিষয় না থাকে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ করোনা দুর্যোগে কৌশলগত পরিকল্পনা করেই অগ্রসর হয়েছে এবং প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করে সময়োপযোগী ব্যবস্থায় সফলতাও অর্জন করেছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমাদেরও এ লক্ষ্যে এগোনো দরকার। তথ্য বিভ্রাট যাতে সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারেও সজাগ থাকা জরুরি। কারণ তথ্য বিভ্রান্তি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে- এও মনে রাখতে হবে। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে না পারলে সব ব্যবস্থার পরিসর বাড়িয়েও প্রত্যাশিত ফল মিলবে না। লকডাউন দীর্ঘদিন চালানো আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আরও কঠিন। লকডাউন না দিয়েও শুধু স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই বিশ্বের কোনো কোনো দেশ সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম হয়েছে- এই দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে। স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণই রক্ষাকবচ’। লকডাউন দেওয়ার পরও যদি তা মানা না হয়, তাহলে কোনো ফল মানুষ পাবে না। বরং পিছিয়ে পড়বে দেশ সবকিছু থেকে। তাই কৌশল পরিবর্তন করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন অনেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে