কোভিড জাতীয় কমিটির পরামর্শের বাস্তবায়ন নিয়ে ভাবতে হবে

| রবিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এবার দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটি এ পরামর্শ দিয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ শহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সুপারিশ করা হয়। শুক্রবার রাতে করোনা নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণী শীর্ষক এক বৈঠকে শেষে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। যদিও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা- যেমন: মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এছাড়া জনগণকে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পুনরায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সব ধরনের সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ এই সময় বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সভা/কর্মশালার ব্যবস্থা অনলাইনে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের বিষয়ে নিয়মিত নজরদারির বিষয়ে পরামর্শক কমিটি গুরুত্বারোপ করেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীসহ সবাইকে দ্রুত টিকা আওতায় নিয়ে আনতে বলা হয়েছে। সব পয়েন্ট অফ এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন আরও জোরদারকরণে সুপারিশ করা হয়। সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা মোকাবেলায় হাসপাতাল প্রতি বিশেষ করে পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা, পর্যাপ্ত অঙিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
স্মরণযোগ্য যে, অল্প কিছুদিন আগে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, নতুন বছরেও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের জন্য। তাঁরা বলেছেন, একটার পর একটা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন আসছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সেটা বাংলাদেশেও আসছে। এটা ঠেকাতে পারাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যেভাবে আমাদের সব বন্দর খোলা আছে, তাতে এটা করা কঠিন। বর্তমান ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন যেহেতু অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করতে সক্ষম তাই এই ভ্যারিয়েন্টের মোকাবেলা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁরা আরো বলেন, আমরা পদক্ষেপগুলো অনেক দেরিতে নেই। বর্তমানে জনসাধারণের মধ্যে একধরনের শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের পাবলিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, কিন্তু সরকারের এই ব্যাপারে কোন নজরদারি আছে বলে দেখা যাচ্ছে না। আমাদের নিয়মনীতিগুলো পালনের ব্যাপারে আরও সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে আইনের প্রয়োগও করতে হবে। বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। টিকার জন্য বাংলাদেশকে নির্ভর করতে হয় কোভ্যাঙ সহায়তার ওপর। বাংলাদেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে টিকার আওতায় আনতে চায় বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৬শে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মাত্র ২৮.৪৪ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট পত্রিকান্তরে বলেন, মহামারি থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল টিকা পাবার সমঅধিকার নিশ্চিত করা এবং বিশ্বব্যাপী টিকা দেওয়ার হার বাড়ানো। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কয়েক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পর সরকার এখন বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু করেছে। বুস্টার ডোজ হিসাবে দেয়া হচ্ছে ফাইজার, মর্ডানা এবং অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। কিন্তু জনসংখ্যার বিচারে তা এখনো সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, টিকার কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমরা কিন্তু এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে হলে আমাদের দেশের সব জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মোট কথা, এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ভাবতে হবে। লকডাউন ধরনের কোনো কর্মসূচির দিকে না গিয়ে সর্বহারে মাস্ক পরিধানের ওপর জোর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে