কোভিড : ঋণের বোঝা লাঘবে বৈশ্বিক পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী

| বুধবার , ৩১ মার্চ, ২০২১ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চলমান মহামারী ও পরবর্তীতে আর্থিক খাতের তারল্য সঙ্কটের দ্রুত সমাধান এবং ঋণের বোঝা লাঘবে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেবট আর্কিটেকচার অ্যান্ড লিকুইডিটির’ ওপর ‘ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য এরা অব কোভিড-১৯ অ্যান্ড বিয়ন্ড ইনিশিয়েটিভ’ (এফএফডিআই) শিরোনামে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ও কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তারল্য সঙ্কট মোকাবেলা ও ঋণের বোঝা লাঘবে আমাদের উচ্চাভিলাষী ও সমন্বিত বৈশ্বিক কর্ম-পরিকল্পনা প্রয়োজন। খবর বিডিনিউজের।
কোভিড-১৯ এর মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পুরো বিশ্বকে যখন অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তখন দ্রুত উত্তরণ নিশ্চিত করতে জরুরি ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ওএন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্ব-নেতাদের এই বৈঠকের আহ্বান করেছেন। অর্থ সরবরাহ ও ঋণ সমস্যার সমাধানে অধিকতর সাহসী ও সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরাই ছিল উচ্চ-পর্যায়ের এ ভার্চুয়াল বৈঠকের লক্ষ্য।
২০২০ সালে এফএফডিআই এর পৃষ্ঠপোষকতায় মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তার লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করতে কয়েকটি বৈঠকের পর এই ভার্চুয়াল বৈঠক হল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভিডিও বার্তায় বলেন, জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডির সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে আমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশ, এমডিবিএস (মাল্টিলেটারেল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকস) এবং আইএফআইএস (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন) এর উচিত বৃহৎ পরিসরে ও নতুন ‘স্পেশাল ড্রইং রাইটস’-এর মত বরাদ্দের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো।
উপযুক্ত সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক ঋণ কাঠামো সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির জন্য উন্নত দেশগুলোর রাজস্ব প্রণোদনা, অর্থনীতিতে বিশেষ সুবিধা ও ঋণ রেয়াত বাড়াতে হবে। এসডিজির সাথে সঙ্গতি রেখে এলডিসিতে (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজ) উত্তরোণের জন্য অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন আন্তর্জাতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে প্রধানমন্ত্রী মত দেন।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলাকালে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে এবং বিশ্ব এখনও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে আনুমানিক ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করেছে।
এ সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর থেকে মহামারীর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই ১.২৪ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১৪.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ শুরু করেছি, যা আমাদের জিডিপির প্রায় ৪.৪৪ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করতে বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য ও তহবিল সরবরাহ করেছে সরকার। আমরা ফরেইন এক্সচেঞ্জ মার্কেট, ফরেইন ট্রেড ও ফাইন্যান্স, রেমিটেন্স, বৈদেশিক ঋণ- ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সহনীয় করতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করেছি। চলমান সঙ্কটেও বিচক্ষণ ঋণ নীতির কারণে বাংলাদেশ এখনো ভালোভাবে ঋণ পরিশোধের সুনাম ধরে রেখেছে বলে বৈঠকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইআইইউসির নতুন ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা