ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংকেত প্রচার করে। এরমধ্যে দূরবর্তী সতর্ক সংকেত, দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, স্থানীয় সতর্ক সংকেত, স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপদসংকেত, মহাবিপদসংকেত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত। ঝড়ের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তর সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি এবং নদীবন্দরের জন্য ৪টি সংকেত প্রদান করে। এই সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে।
সমুদ্রবন্দরের জন্য দেয়া ১১টি সংকেতের মধ্যে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত বলতে বুঝায় জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত বলতে বুঝায় গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২–৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বলতে বুঝায়, বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০–৫০ কিলোমিটার হতে পারে। ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বলতে বুঝায় বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১–৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় হয়নি।
৫ নম্বর বিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২–৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ৬ নম্বর বিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২–৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ৭ নম্বর বিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২–৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম পাশে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। ৯ নম্বর মহাবিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত বলতে বুঝায় আবহাওয়ার বিপদসংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
নদীবন্দরের জন্য চারটি সংকেতের মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে। এরমধ্যে ১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত বলতে বুঝায় বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত বলতে বুঝায় বন্দর এলাকায় নিম্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার গতিবেগের একটি ঝড় বা একটি কালবৈশাখী হতে পারে। নৌযান এটির কবলে পড়ার আশংকা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২–৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করতে হবে।
৪ নম্বর নৌ মহাবিপদসংকেত বলতে বুঝায় বন্দর এলাকা একটি প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। সতর্ক সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর এবং নৌ বন্দরের জন্য দেয়া হলেও এগুলোর দেশের উপকুলীয় অঞ্চলের জনগনের জানমাল রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মোখার ব্যাপারে এখনো বেশ সময় হাতে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।