কারা কেন সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সত্য বেরিয়ে আসুক

কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে

| শুক্রবার , ১২ মে, ২০২৩ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থানপাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রমকে যখন হত্যা করা হয়, তার মেয়ে নাহিদ ইজাহার খানের বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। কঠিন সেই সময়ে বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা নাহিদ এখন বাংলাদেশের একজন আইনপ্রণেতা। বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ৪৮ বছর পর একটি মামলা করেছেন তিনি। তার প্রত্যাশা, এখন অন্তত ভালো করে অনুসন্ধান হোক; কারা কেন সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সেই সত্য বেরিয়ে আসুক।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজকে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘চিন্তা করেছিলাম, জীবনে কোনো একটা সময়, যখন আমি মনে করব যে, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাইতে পারব, আমি নিজে গিয়ে মামলা করব। গতকাল সেটাই আমি করে এসেছি।’

তিনি জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে খালেদ মোশাররফসহ তিন সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা নিয়ে তাদের পরিবারের আক্ষেপ ছিল।

সেই আক্ষেপ ঘোচাতে বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম রশিদুল আলম আগামী ১২ জুনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন পুলিশকে।

নাহিদ ইজাহার খান বলেন, এটা একটা ডিফিকাল্ট বিষয় ছিল বাবার হত্যার বিচারের জন্য মামলাটা করা। সন্তানের কাছে এরকম দিন যেন না আসে, যে তার বাবার হত্যার বিচার চাইতে হয়। সেই দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ করে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন সংরক্ষিত আসনের এই সংসদ সদস্য। বলেন, বাবা যখন চলে যান, তখন আমার বয়স ৫ বছর, আমার ভাইয়ের ছিল ৮ বছর। আপনি জানেন যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, সব কিছু পুরো লাইফ স্টাইল আমাদের চেঞ্জ হয়ে যায়। আমরা স্কুলে যেতে পারতাম না, একেক দিন একক বাসায় থাকা, আমাদের ছোট বেলা এবং পরবর্তীতে কী গেছে আমাদের ওপরে।

কঠিন ওই সময়ে মায়ের কাছ থেকে লড়াই করার শক্তি পাওয়ার কথা জানিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, যখন আমরা মাকে বলতাম যে, বাবার নামে কি সব বলে, আমার বাবা নাকি দেশদ্রোহী, স্কুলে পড়তে পারতাম না সে ভাবে। তখন মা সব কিছু বাদ দিয়ে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২৭ নম্বর আসামি নাজমুল হুদা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরের কমান্ডার। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গরিবপুরের ট্যাংক যুদ্ধ এবং চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাভূত হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসাবে যশোর মুক্ত হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব দেয়। নাহিদ ইজাহার খান বলেন, তার বাবা যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হন, তখন তার বয়স ছিল ২৭ বছর। আর মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। মামলা করতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই এমপি বলেন, আমার মনে হয়েছে, দিস ইস দ্য রাইট টাইম। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আছে আমাদের সাথে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আছে। নিজেকে এখন আর একা মনে করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, টিভি খুললেই এখন তার মত অনেক সন্তানকে তিনি দেখেন, যারা বাবার হত্যার বিচার চায়।

দেরিতে হলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা জানিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, আমি মানুষের মুখে শুনেছি মেজর আসাদ এবং মেজর জলিল আমার বাবাকে হত্যা করেছে। তারা নরমালভাবে হত্যা করেনি, ভাল করে অনুসন্ধান হোক। তথ্য আরো বের হয়ে আসুক। সব কিছু আসুক, কারা কারা জড়িত ছিল, কেন তাদের হত্যা করা হল।

ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর মো. আসাদুজ্জামান মারা গেলেও মেজর মো. আব্দুল জলিল (অব.) এখনও জীবিত জানিয়ে মামলার বাদী বলেন, তিনি এখন কোথায় আছেন, তদন্ত করে সেটা বের করা হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানি সরবরাহ বজায় রাখতে ওয়াসার ৫ কন্ট্রোল রুম
পরবর্তী নিবন্ধকোন সংকেতের কী মানে