কেউ যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে

আটা-ময়দার বাজার:

| রবিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে আটা-ময়দার দাম। আমদানির পরিমাণও কমেছে। এ অবস্থায় অস্থির হয়ে উঠেছে আটা-ময়দার বাজার। চালের দামে আটা-ময়দা কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি এবং ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা আটা-ময়দার বাজারকে অস্থির করে তুলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বলা যায়, আটা-ময়দার মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ক্রেতাসাধারণ। তবে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, দাম বাড়লেও বাজারে এখনো পর্যাপ্ত মজুত থাকায় বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা নেই। তবে নতুন করে কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করতে পারে সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের গম উৎপাদক বড় দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে সারা দেশে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে সমগ্র এলাকায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাজারে সব জিনিসের দামই তো বাড়ছে। আগের চেয়ে তেল-ডাল-আটার দাম বেশি। এক কেজি চাল কিনতেই ৫০ টাকার বেশি লাগে। এখন কামাই কম। কিন্তু বাজার করতে খরচ বেশি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব জিনিসের বাড়তি দাম সবাইকে বেকায়দায় ফেলেছে।

এতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা ও কর্মসংস্থানে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে এখন আটার সরবরাহেও টান লেগেছে। এতে খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটার দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের সংসার খরচে আরেক দফা চাপ বাড়বে। প্রভাব পড়বে রেস্তোরাঁ ও বেকারির ব্যবসায়।

বিভিন্ন এলাকার পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী ও আটা-ময়দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে প্যাকেটজাত দুই কেজি আটার সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২৬ টাকা। গত বুধবার থেকে কোম্পানিগুলো বাজারে নতুন যে প্যাকেটজাত আটা বাজারে ছেড়ে সেগুলোর গায়ের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩২ টাকা। তাতে প্যাকেটজাত আটার প্রতি কেজির সর্বোচ্চ দাম পড়ছে ৬৬ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম আরও তিন টাকা বাড়ল। তবে এখনো রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে পুরোনো দামে আটাও পাওয়া যাচ্ছে। আবার কোম্পানিভেদে আটার দামও ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে।

বাজারে আটার দাম বাড়তির দিকে জানিয়ে এক শিল্পকারখানার মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘জ্বালানি-সংকটের কারণে রেশনিং করেও কারখানার সক্ষমতার ৫০ শতাংশ পণ্যও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও বাজারে আটা-ময়দার দাম বাড়তি। টিসিবির হিসাবে বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা ৬০ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে প্যাকেটজাত ময়দার দাম আরেকটু বেশি-কোম্পানি ও মানভেদে প্রতি কেজির দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে গত এক মাসে নতুন করে খোলা আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১৬ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৭৩ ও ৬৮ শতাংশ। আর খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৬৭ ও ৫৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা আছে। এর প্রায় ৬৫ লাখ টন আমদানি হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো গম আমদানি করে আটা ও ময়দা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে। আবার খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হয়। বছরজুড়ে কয়েক দফায় আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এতে চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সবাই।

অন্যদিকে কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আটা-ময়দার দামে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি ভোক্তাদের। তাঁরা বলছেন, ডলার সংকট আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কোনো চক্র আটা-ময়দার বাজার অস্থির করছে কি না তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে