কী কী আয়বর্ধক প্রকল্প নেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে

| রবিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি কর্পোরেশনগুলোকে নিজেদের আয় বাড়িয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে চট্টগ্রামের খাল খননের একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রী কর্পোরেশনগুলোর মেয়রদের ঢাকার দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের আয় বাড়িয়ে নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করার তাগিদ দেন। এসময় তিনি চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর উদাহরণ দেন। আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দীন মেয়র থাকাকালীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আর্থিক ঘাটতি ছিল না, তার আমলে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সাবেক এ মেয়রকে বিশেষভাবে স্মরণ করে বলেন, মহিউদ্দীন চৌধুরীর সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আর্থিক ঘাটতি ছিল না। চমৎকার ছিল। নতুন মেয়র মহোদয়কে বলবেন, আমরা আশা করব যে তার (মহিউদ্দিন চৌধুরী) মত শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে কাজ করবেন। আপনাদের চিন্তা করতে হবে, সে যেভাবে ফাইন্যান্সিয়ালি নিজেকে সাউন্ড করেছিল, আপনারাও করবেন। সরকার থেকে বেশি চাইবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনার আলোকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি নিয়ে ভাবছেন। সিটি মেয়র গত বৃহস্পতিবার তাঁর টাইগারপাসস্থ দপ্তরে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে এ ব্যাপারে সভায় মিলিত হন। সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শুধু সরকারি অনুদান ও থোক বরাদ্দের ওপর কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কর্পোরেশনকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে সরকারের দিকে চেয়ে না থেকে করের আওতা বাড়ানো ও আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নাই।

সভায় মেয়র হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সের হালনাগাদ আদায় কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের কর, উপকর, রেইট, টোল এবং ফিস আদায়ের আরো যে ২৬টি খাত রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় মেয়র বলেন, সরকারি গেজেট অনুযায়ী আরোপনীয় ২৬ খাতে কর, উপ কর, রেইট ফিস -এর মধ্যে কিছু খাত থেকে কর্পোরেশন আয় করলেও আরো অনেক খাত রয়েছে যা করের আওতার বাইরে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সমস্ত সিটি কর্পোরেশনকে আয়বর্ধক প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দিয়েছেন। আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আয়বৃদ্ধির খাত হিসেবে কর বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো প্রকল্প আপাতত চোখে দেখছেন না বলে মনে হয়। আয় বৃদ্ধির কথা বললেই কর বৃদ্ধি ছাড়া অন্য বিষয় তাঁর ভাবনার মধ্যে আসছে না। প্রধানমন্ত্রী সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর উদাহরণ টেনেছেন। ভাবতে হবে মহিউদ্দীন চৌধুরী আয়বৃদ্ধির খাত হিসেবে করবৃদ্ধি করে নগরবাসীর রোষাণলে পড়েছিলেন কিনা! বরং চলতি কর বলবৎ রেখে বহু ক্ষেত্রে কর মওকুফ করে প্রশংসার ভাগীদার হয়েছেন।

সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধির মধ্যে যেসব কাজের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর বিভিন্ন ভাগ ও উপ-ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, জন্ম মৃত্যু ও বিয়ে রেজিস্ট্রি, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা, পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রণালী, বৈদ্যুতিক বাতি ও পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা এবং অন্যান্য যোগাযোগের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি।

কিন্তু নগরবাসী কি সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিপূর্ণ সুবিধা পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে না। তাঁরা যে কর প্রদান করছেন, সে হিসেবে সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। আমাদের এখানে মেয়ররা নির্বাচনের আগে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে কর বৃদ্ধি করবেন না। পরে সে-কথাটি আর রক্ষা করা যায় না। তবে কর বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান কর আদায়ের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো তৎপর হতে হবে। কর দেওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বলতে হবে, কর না দিলে নগরের উন্নয়ন করা যাবে না।

এ কথা সত্যি যে, সিটি কর্পোরেশনের বিশাল ব্যয় নির্বাহের জন্য তাকে আয়বর্ধক প্রকল্প নিতে হবে। কিন্তু কী কী প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে, এসব নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা যায় নগর পরিকল্পনাবিদদের কাছ থেকে। তাঁদের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে তার ফল কর্পোরেশনের উন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে