কাবুলে তালেবান সরকার

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আফগানিস্তানে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানায়, মঙ্গলবার ঘোষিত এই নতুন সরকারে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান করা হয়েছে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে।

তার উপ-প্রধান হিসাবে কাজ করবেন তালেবান গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।

আর ২০১৬ সাল থেকে তালেবান গোষ্ঠীর অন্যতম উপনেতা মোল্লা ইয়াকুব দায়িত্ব পালন করবেন তত্ত্বাবধায়ক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে। বিডিনিউজ

রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ নতুন সরকারের মন্ত্রীদের নাম জানিয়েছেন।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে এবং নেটওয়ার্কটির প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে। এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের কালো তালিকাভুক্ত।

সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ের ‘মুজাহিদ’ নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানির ছেলে হলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। গত কয়েক বছরে কাবুলে যে কয়টি বড় ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে, তা হাক্কানি নেটওয়ার্কেরই চালানো বলে মনে করা হয়।

আফগান কর্মকর্তাদের হত্যা, বিদেশি সৈন্যদের অপহরণের অভিযোগও রয়েছে এই দলটির বিরুদ্ধে। হাক্কানির মাথার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার পুরষ্কারও ঘোষণা করেছে।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, নতুন সরকারে নিয়োগ পাওয়া সবাই ভারপ্রাপ্ত হিসাবে কাজ করবেন।

মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে যে তালেবান আড়াই দশক আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিয়েছিল; বিদেশি সেনাদের আক্রমণে পাঁচ বছরের মধ্যে ক্ষমতা হারাতে হলেও নতুন নেতৃত্বের অধীনে দুই দশক পর আবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা সেই প্রয়াত মোল্লা ওমরের সহযোগী মোল্লা হাসান আখুন্দকেই এবার সরকারের প্রধান করা হয়েছে। তালেবান নেতা হিসাবে তিনি তেমন সুপরিচিত না হলেও জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম আছে।

মোল্লা হাসান আখুন্দ বর্তমানে তালেবানের প্রভাবশালী সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী পরিষদ ‘রেহবারি শুরা’ বা নীতি-নির্ধারণী পরিষদের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ ‍শুরুর আগেও হাসান তালেবান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

সামরিক নেতা হিসাবে নয় বরং ধর্মীয় নেতা হিসাবেই মোল্লা হাসান বেশি পরিচিত এবং তিনি তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দাজার অতি ঘনিষ্ঠজনজন বলেও শোনা যায়।

তালেবান গোষ্ঠীর উৎসভূমি হিসাবে পরিচিত কান্দাহার থেকে মোল্লা হাসানের আগমন। তালেবান সশস্ত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন তিনি।

নতুন তালেবান সরকারে মোল্লা হাসানের উপপ্রধান হিসাবে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন, সেই মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার হচ্ছেন, দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের চেয়ারম্যান।

বারাদারও কান্দাহার রাজ্যের বাসিন্দা । তালেবান বাহিনী প্রতিষ্ঠায় তারও রয়েছে অবদান। অন্য অনেক আফগানদের মতো গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারাদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি। জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন।

২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন বারাদার। কিন্তু ২০১৮ সালে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনা গতিশীল করতে ওয়াশিংটনের চাওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পরে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন বারাদার। চুক্তিপত্রে তালেবানের পক্ষে সইটিও তিনি করেন।

ওদিকে, তালেবান সরকারের নতুন প্রতিরক্ষান্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। মোল্লা হেবাতুল্লাহর ছাত্র ছিলেন তিনি। হেবাতুল্লাহ তালেবানের শক্তিশালী সামরিক কমিশনের প্রধান হিসাবে ইয়াকুবকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

যুদ্ধের কৌশল ঠিক করা, অভিযান পরিচালনা করা তার কাজের অংশ। বাহিনীতে শ্রদ্ধার পাত্র মোল্লা ইয়াকুব, তা অনেকটা তার প্রয়াত বাবার কারণে। যে কারণে দলে বিভেদ কিংবা কোন্দলের সময় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান তিনি।

তালেবানের নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোল্লা আমির খান মুত্তাকি কে। তিনি তালেবানের এক ঊর্ধ্বতন নেতা, রাজনীতিবিদ এবং কাতারে আলোচক দলেরও সদস্য।

তালেবান আফগানিস্তান দখল করার কয়েক সপ্তাহ পর নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করল। এর মধ্য দিয়ে দলটি তাদের দেশের নতুন নেতৃত্ব কীভাবে শুরু হতে চলেছে তার প্রথম একটি চিত্র তুলে ধরল।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “আমাদের সরকার কোনও জাতিগোষ্ঠীর ভিত্তিতে চলবে না। আমরা এই ধরনের রাজনীতিকে স্থান দেব না।”

তালেবানের নতুন সরকার ঘোষণায় মন্ত্রিসভায় কোনও নারীর নাম ঘোষণা হতেও দেখা যায়নি। তালেবান নেতারা এবার আফগানিস্তান দখলের পরই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, আফগান সমাজে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকবে। তারা শিক্ষাও নিতে পারবে।

কিন্তু কার্যত সরকার গঠনের আলোচনায় নারীদের রাখা হয়নি। বরং সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে তালেবান এই সংকেতই দিয়েছে যে, নারীদের ঘরে থাকা উচিত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তালেবান নারীদেরকে কাজও ছাড়তে বলেছে।

সরকারে কোনো নারীর নাম কেন ঘোষণা করা হয়নি – বিবিসি’র এক সাংবাদিকের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, মন্ত্রিসভা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদও বলেছেন, “সরকার এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। সবাই এখন কেবল ভারপ্রাপ্ত। আমরা দেশের অন্য অংশ থেকেও লোকজনকে নেওয়ার চেষ্টা করব।”

তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দাজা এরই মধ্যে নতুন সরকারকে ইসলামিক নিয়মবিধি এবং শরিয়া আইন সমুন্নত রাখার বার্তা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে দেশের স্বার্থ সর্বোতভাবে সুরক্ষিত রাখা এবং দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নও নিশ্চিত করার আহ্বান এক বিববৃতিতে জানিয়েছেন তিনি। তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর থেকে সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দাজার কাছ থেকে আসা এটিই প্রথম বার্তা।

তালেবান বাহিনীতে হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার পরিচয় ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসাবে। রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় যে কোনও বিষয়েই তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে নতুন সরকারে তিনি কী ভূমিকা পালন করবেন সে ব্যাপারে তালেবান এখনও কিছু জানায়নি।

২০১৬ সালে তৎকালীন নেতা মোল্লা মানসুর আখতার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর আখুন্দজাদা নেতৃত্বে আসেন। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। আল কায়দার শীর্ষনেতা আইমান জাওয়াহিরির আশীর্বাদই তাকে তালেবানের শীর্ষনেতার আসনে বসিয়েছে বলে মনে করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে দু’টি জাহাজের সংঘর্ষে নাবিক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী মোহনায় জোয়ারের সময় দুই জাহাজের সংঘর্ষ