কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ সংসার চালাতে হিমশিম

মহালছড়ির জেলে পল্লীতে নেই ঈদ আনন্দ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১১ মে, ২০২১ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

সুজন আলীর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। ২৪ বছর ধরে তিনি কাপ্তাই লেকে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন। বর্তমানে পরিবারের সদস্য ৮ জন। প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ১ মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ। ফলে এই ৯০ দিন কার্যত বেকার থাকতে হবে তাকে। চেঙ্গীর তীরে বসে কিভাবে সামনের দিনগুলি কাটাবেন সেই শঙ্কার কথা জানান প্রতিবেদককে জানান তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। সরকার আমাদেরকে মাসে ২০ কেজি চাল দিচ্ছে। এটা দিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ দিন চলে। চালের সাথে অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যোগাড় করতে হয়। মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় আয় নেই। তার মত খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ১৫শ ৯১ জেলের অবস্থা এখন একই।
সরেজমিনে মহালছড়ির মৎস্য উপকেন্দ্রের পাশে লাগানো সিলেটি পাড়া (জেলে পল্লী) ঘুরে সুজন আলীর কথার সত্যতা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। দৈনন্দিন খাবার জোগাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রতিটি পরিবারের আয়ের পথও বন্ধ। পুরো পল্লীর মানুষের মাঝে দারিদ্র্যতার ছাপ লক্ষণীয়। জেলে পল্লীর বাসিন্দা ফরিদা বেগম ও ফজর আলী জানান, নয়মাস কাপ্তাই লেকে মাছ ধরে সংসার চলে। তিনমাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। ওই সময় আমাদের ফ্যামেলি পুরো অচল হয়ে পড়ে। এখন ২০ কেজি করে চাল দেয় সরকার। আমার ফ্যামিলিতে সদস্য ৮ জন। সরকারি রেশন দিয়ে তো কিছুই হয় না। এসময় যদি সরকার একটু বাড়তি সহযোগিতা করত তাহলে কোনো রকমে চালাতে পারতাম।
জেলে ফুলচান মিয়া জানান, এবার (চলতি মৌসুমে) লেকে পানি কম ছিল। মাছও কম পেয়েছি। এজন্য কষ্ট বেড়েছে। উর্পাজন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি যে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে তা অত্যন্ত কম।
একই দাবি করেছেন মহালছড়ির মাছ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতারা। সমিতির সভাপতি ফরিদ মিয়া জানান, জেলেরা সারাবছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনমাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেদের কষ্টে পড়তে হয়। তাই এসময় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেয়া জরুরি।
মহালছড়ি উপজেলা মৎস কর্মকর্তা প্রবীণ চন্দ্র চাকমা জানান, চলতি অর্থবছরে মহালছড়ি ও দীঘিনালা ২৭শ ৭৬ জন জেলের জন্য সরকার চাল বরাদ্দ দিয়েছে। মে ও জুন মাসে মহালছড়ির জন্য ৬৩ মেট্রিক টন ও দীঘিনালার জন্য ৪৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবে।
এদিকে জেলেদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন সংস্থাটির কাপ্তাই হ্রদ মৎস উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। চিঠিতে তিনি মাথাপিছু ৩০ কেজি চাল বরাদ্দের দাবি জানান। কাপ্তাই হ্রদ মৎস উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের উপকেন্দ্র প্রধান মো. নসরুল্লাহ জানাান, মহালছড়ি ও দীঘিনালায় ২ হাজার ৭শ ৭৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদের জন্য চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বর্ণের দাম বাড়ল ভরিতে ২,৩৩৩ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধহাসপাতালে কাতরাচ্ছেন একই পরিবারের ৩ জন