কানো ক্রিসটেলস কলম্বিয়ার একটি নদী। তবে এটা কোনো যেন তেন নদী নয়। যাকে বলা হয় ‘রঙের স্বর্গ নদী’। পৃথিবীর সবচেয়ে এই রঙিন নদীটি অনেকের কাছে ‘তরল রংধনুর নদী’ নামেও পরিচিত।
প্রকৃতির গুপ্তধনে সমৃদ্ধ জীব-বৈচিত্রে ভরপুর আর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কানো ক্রিসটেলস কেবল একটি কিংবা দুটি রঙে রঙিন নয়। পাঁচ-পাঁচটি দর্শনীয় রঙে রঙিন এই নদী।
বৈচিত্র রঙের বাহার দেখে হঠাৎ যে কেউ থমকে দাঁড়াবে। মনে হবে যেন রংধনু গলে বয়ে চলেছে রঙের স্রোতধারা। ৬২ দশমিক এক মাইল দীর্ঘ নদীটির কোথাও টানা হলুদ রং, কোথাও লাল, কোথাও সবুজ, কোথাও নীল আবার কোথাও কালো।
পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে ১০০ কিলোমিটার বয়ে চলা নদীটি বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে স্বাভাবিক। তখন আর দশটি পাহাড়ি নদীর মতো ধূসর পাথরের তলদেশ, শান্ত পানি ও পরিষ্কার স্রোত থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম শেষে বর্ষা মৌসুমে (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচটি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। তখন নদীর তলদেশে লাল লতা-গুল্মের মতো তরল পদার্থ নদীর স্রোতের সঙ্গে দুলতে থাকে। তার সঙ্গে কিছু পাথরের গায়ে জমে থাকা সবুজ শ্যাওলার আবরণ, কালচে পাথরের রঙ, হলুদ বালু ও ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভা (নীল রঙ) স্বর্গীয় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে সেখানে। যেখানে স্রোত বেশি সেখানে লাল রঙের গুল্ম জাতীয় পদার্থটি পাথরের গায়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
কানো ক্রিসটেলস কিংবা স্বর্গের নদী যে শুধুমাত্র পাঁচটি রঙের কারণেই সুন্দর তা কিন্তু নয়। এখানে রয়েছে ঝর্ণাধারা, সুইমিং পুলের মতো দেখতে জলাশয় ও গুহা। যা নদীটির সৌন্দর্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। পাশাপাশি নদীটিকে করেছে রহস্যময়ী।
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো- এই নদীটিতে মাছ কিংবা অন্যান্য জলজ প্রাণি নেই। ফলে এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটা ও নিশ্চিন্ত মনে গোসল করার পরিবেশ দেয়।
আরো একটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো- নদীটি কলম্বিয়ার এমন একটি দুর্গম স্থানে, যেখানে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এক সময় সেখানে যাওয়া সহজগম্যও ছিলো না। তবে এখন যাতায়াতে কোনো সমস্যা নেই। রয়েছে ট্যুরিস্ট গাইড। যারা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে স্বর্গ থেকে নেমে আসা সেই নদীর কাছে।
এক সময় সেখানে ডাকাতের উৎপাত ছিল। যারা দর্শনার্থীদের সর্বস্ব লুটে নিতো। এমনকী খুন পর্যন্তও করতো। এখন অবশ্য আর এমনটা হয় না। ২০০৯ সাল থেকে এটি ভ্রমণের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করেছে কলম্বিয়া। তারও অনেক আগে কানো ক্রিসটেলস নদী, এর জন্মদানকারী পাহাড় ও এই অঞ্চলটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে কানো ক্রিসটেলসের পাশে রয়েছে রাতে থাকার ব্যবস্থা। এছাড়াও আছে পরিবার পরিজন নিয়ে গিয়ে বন-বাদাড়ে রান্না-বান্না করে খাওয়ার সুব্যবস্থাও।
তবে কলম্বিয়ার পর্যটন বোর্ড নদীটি বাঁচাতে তৎপর। যেজন্য তারা পর্যটকের সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। দিনে দুইশ’র বেশি পর্যটক ওই নদী দেখতে যেতে পারবে না। তাও একসঙ্গে সাতজনের বেশি অনুমতি নেই।