কাটতে শুরু করেছে টিকার সংকট জনমনে আশার সঞ্চার

| শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে টিকার সংকট ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চীন থেকে সরকারের কেনা দেড় কোটি টিকার ২০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ। কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান ও ইইউ থেকে আরও ৩৫ লাখ ডোজ টিকা এ মাসের শেষ সপ্তাহে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চীন ও মডার্নার টিকা আসার পর পুনরায় শুরু হয়েছে গণটিকার নিবন্ধন। নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা ৭০ লাখ ডোজ এবং ভারত উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। চীনের সিনোফার্ম থেকে এসেছে কেনা টিকার ২০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসেবে চীন দিয়েছে ১১ লাখ ডোজ। কোভ্যাঙ থেকে ফাইজারের টিকা এসেছে ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ। এর মধ্যেই সিনোফার্মের টিকা দিয়ে সারা দেশের মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের।
দৈনিক আজাদীতে ৮ জুলাই প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিনোফার্মের তৈরি আরো ৭০ হাজার ডোজ চীনা টিকা আসছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রামের জন্য এই সংখ্যক চীনা টিকা বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, সিনোফার্মের তৈরি আরো ৭০ হাজারের সামান্য বেশি ডোজ টিকা বরাদ্দের কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। যদিও এসব টিকা পাঠানোর নির্দিষ্ট সময় এখনো জানানো হয়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বরাদ্দ দেয়া এসব চীনা টিকা চট্টগ্রামে চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
এর আগে প্রথম দফায় সিনোফার্মের তৈরি ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চীনা টিকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। টিকা প্রাপ্তির পর গত ১৯ জুন থেকেই চীনা এ টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে এ টিকাদান শুরু হয়। পরে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত অন্যদের টিকাদান কার্যক্রমও শুরু হয়, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তবে চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রের বাইরে চট্টগ্রামের আরো দুটি (চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতাল) কেন্দ্রেও চীনা এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
ভ্যাকসিনকে অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করা না হলে দেশে ভ্যাকসিনের সংকট হতো না বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আসলে সংক্রমণের হার যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। লোকজন কোনোভাবেই করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। জ্বর-কাশি দেখা দিলেও করোনা টেস্ট করাচ্ছে না। অসচেতনতার অভাবে বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সচেতনতা অবলম্বন।
টিকা গ্রহণ ও প্রাপ্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় টিকা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। টিকা দিলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। বাংলাদেশে অনেক উন্নত দেশের আগেই গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। মাঝে সরবরাহ সংকট হওয়ায় কিছুটা ধীর গতি এসেছিল। সরকার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং সে টিকার প্রথম চালানও দেশে চলে এসেছে। এছাড়া কোভ্যাঙ থেকেও মডার্না ও ফাইজারের টিকা পেয়েছে দেশ।’ তাঁরা বলেন, ‘টিকার সংকট কাটতে শুরু করেছে। এখন টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে শুরু হচ্ছে গণটিকাদান। উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান টিকা মজুদ করে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। বরং যেসব দেশে প্রয়োজন তাদের দিলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হবে।’
এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ প্রথম যে ব্যাচের টিকা হাতে পেয়েছে তা চীনের। ভাইরাসটি সংক্রমণের ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো ভেদাভেদ মানেনি স্বাভাবিকভাবে এর প্রতিষেধক বণ্টনে বৈষম্য প্রত্যাশিত নয়। তার চেয়ে বড় কথা, করোনা যেহেতু বৈশ্বিক সংকট, বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে। তবে টিকা সংকট সমাধান হয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে