কাউন্সিলরের স্বাক্ষর জাল করে জাতীয়তা সনদ প্রদান

প্রতারক আটক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কাউন্সিলরের স্বাক্ষর জাল করে র্দীঘদিন ধরে জাতীয়তা সনদ ইস্যু করে প্রতারণা করে আসছিল নগরের হালিশহরের মো. খালেক (৩৬)। প্রতিটি সনদের বিপরীতে সে আদায় করতো ১৫০ টাকা। খালেকের কাছ থেকে সংগৃহীত এরকম একটি জাতীয়তা সনদ নিয়ে গতকাল ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড কার্যালয়ে আসে আছমা বেগম নামে এক মহিলা। সে একই নামে আরেকটি সনদ ইস্যু করতে বলেন ওয়ার্ড কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আজাদ খানকে। এ সময় মহিলার নিয়ে আসা সনদ দেখে অফিস সহকারী বুঝতে পারে সেটি জাল। পরে মহিলার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খালেককে আটক করে হালিশহর থানায় সোর্পদ করা হয়।
পুলিশ তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সীল জব্দ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রতারণার কথা স্বীকার করে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।
ধৃত মো. খালেক উত্তর হালিশহরের গলি চিপা পাড়ার নূর হামিদ ভিলার ফজলুল হকের ছেলে। হালিশহর ফইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন ব্রিজের পশ্চিম পাশে ওএস মূছা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানে বসে জাল সনদ ইস্যু করত। প্রতারণার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরের পার্সোনাল সেক্রেটারি নূরুজ্জামান হালিশহর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল আজাদীকে বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে সার্টিফিকেট দিয়েছিল খালেক। তাকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তিনি বলেন, আছমা বেগম নামে এক মহিলা কার্যালয়ে এসে ওয়ার্ড সচিবকে বলে, ইতোপূর্বে দোকান থেকে একটি জাতীয়তা সনদ নিয়েছে। নতুন করে তার আরেকটি লাগবে। দোকান থেকে নেয়া সনদে অনলাইন বার কোড, সনদ নম্বর এবং ইস্যুর তারিখ ছিল না। আমার স্বাক্ষরটিও ছিল স্ক্যানিং করা। তখনি ওয়ার্ড সচিব বুঝতে পারে সেটা জাল।
কাউন্সিলর বলেন, আমি আসার পর ওই মহিলা যে দোকান থেকে সনদ নিয়েছে সেটি দেখিয়ে দেয়। তখন খালেককে ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়ে আসি। খালেককে জিজ্ঞেস করলে আমার নামে সাত-আটটি সনদ ইস্যু করেছে বলে জানায়। তবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা ধারণা দীর্ঘদিন ধরে সে এ কাজ করে আসছে। তার কাছে একটা সীলও পাওয়া গেছে। সীলটা নাকি অনেকদিন ধরে তার কাছে ছিল। সেখান থেকেই স্পষ্ট সে অনেকগুলো জাল সনদ দিয়েছে। পরে আমরা হালিশহর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
মো. ইসমাইল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে এমন ঘটনা ঘটছে। আমার এখানে ধরা পড়েছে। এরকম জাল সনদ যদি রোহিঙ্গাদের দিয়ে থাকে তাহলে তো বিপদ।
কাউন্সিলরের পার্সোনাল সেক্রেটারি নূরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, অনেকদিন ধরে মো. খালেক জাল সনদ দিয়ে আসছিল। আছমা বেগমকে সে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয়তা সনদ দিয়েছিল। আটক হওয়ার পর সে সবার সামনে টাকার বিনিময়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কাউন্সিলের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয়তা সনদ ইস্যু করার বিষয়টি স্বীকারও করে।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে ১৬ নং চকবাজার, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ও ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের নামে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছিল। কিভাবে সনদগুলো ইস্যু হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেউই জানে না। এ ঘটনায় গত ৯ জুন চকবাজার থানায় একটি ও পতেঙ্গা থানায় দুটি মামলা করেন ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারীরা। বর্তমানে মামলাগুলো তদন্ত করছে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়া ও মহেশখালীতে নৌকার প্রার্থীই পুনরায় মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধসরগরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ