কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমতি বহাল চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার নামে নামকরণের নির্দেশনা হাটহাজারীতে স্বাধীনতা বিরোধীর নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারীতে স্বাধীনতা বিরোধীর নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ মেনে শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখা পাঠদানের এ অনুমতি বাতিল করে। শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হকের স্বাক্ষরে গতবছরের (২০২২ সালের) ৩১ অক্টোবর ইস্যুকৃত এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বাতিলের এ তথ্য জানানো হয়। একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমও স্থগিত রাখে শিক্ষাবোর্ড।

 

তবে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক বাতিল করা প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বহাল চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠদানের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার পূর্বক প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বহাল রাখতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে নামকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ইস্যু করা এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক২ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং৫৫৩১/২০১২ এর রায় এবং বর্ণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব ও সুপারিশের আলোকে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে নামকরণের বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উল্লিখিত স্কুল এন্ড কলেজটির পাঠদানের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার পূর্বক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বহাল রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এ চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককেও। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এরই মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা। গত ১১ এপ্রিল ইস্যু করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠাতে বলা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনে বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা চিঠি দিয়েছি। বিদ্যমান নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পেলে শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে পরবর্তী বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও স্থাপনা থেকে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ২০১২ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৫৫৩১/২০১২) দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আদালত রায় দেন। রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান/স্থাপনা থেকে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়।

স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপজেলার রহিমপুরে ১৯৯০ সালে ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়। পরে নাম রাখা হয় ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজ’। স্কুল শাখায় নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি এবং কলেজ শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি ও পাঠদান চলে প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে হাইকোর্টের আদেশ মেনে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে) পাঠদানের অনুমতি বাতিল করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হকের স্বাক্ষরে গতবছরের (২০২২ সালের) ৩১ অক্টোবর ইস্যুকৃত এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হয়। একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়।

হাইকোর্টের আদেশ মেনে নাম পরিবর্তনে দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়ার পরও সেটি বাস্তবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেয় শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা। তবে কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার পাঠদানের অনুমতি বহাল ছিল।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে হাটহাজারীর ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় চিঠি দেয় শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা। চিঠিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপরও কয়েক দফায় চিঠি দেয়া হয়। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজের পরিবর্তে কিউ সি আইডিয়্যাল স্কুল এন্ড কলেজ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এ প্রস্তাবনার সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারও (আধা সরকারি পত্র) সংযুক্ত ছিল। তবে মের্সাস কিউ সি ট্রেডিং (প্রা.) লি. ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলে প্রতিষ্ঠানটির আবেদন ও সংসদ সদস্যের ডিও লেটারে উল্লেখ করা হয়। ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর এ প্রস্তাবনা সংযুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠায় শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরে পাঠানো চিঠিতে মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করে বোর্ডের কলেজ শাখা। এবার প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বাতিল করা পাঠদানের অনুমতি বহাল রাখতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে নামকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার।.

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ উৎপাদনে আজও রেকর্ড
পরবর্তী নিবন্ধঈদ বাজারে যাওয়া হলো না শিশু কামালের