কর্মজীবী নারীর প্রতি সহমর্মী হোন

সুচিত্রা ভট্টাচার্য | রবিবার , ২৪ মার্চ, ২০২৪ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নারীরা কম বেশি সবাই বিভিন্ন চাকরি বা অন্যান্য পেশাগত কাজে জড়িত। মেয়েদের শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে তদুপরি পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বর্তমানে প্রায় সব মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে চায়। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে চাকরি বর্তমানে এমন কোনও পেশা নেই যাতে মহিলারা কাজ করছে না। বাইরে বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করা সকল নারীই এক কথায় কর্মজীবী। আবার প্রত্যেক নারীই তার পেশাগত পরিচয় এর পাশাপাশি একজন মা, স্ত্রী, পুত্রবধূ বা ভাবি। এই পরিচয়গুলোও তার সমানভাবে রয়েছে। নারী দিবসে আমরা যতই মুখে নারী স্বাধীনতা আর নারীর এগিয়ে যাবার কথা বলি না কেন বেশিরভাগ পরিবারেই মনে করা হয় রান্নাবান্না ও গৃহস্থালি সকল কাজকর্মের দায়িত্ব সম্পূর্ণ নারীদের। একজন স্ত্রী বা মা সে যতই উচ্চপদস্থ চাকুরে হোক না কেন একজন কর্মজীবী নারী হিসেবে আমি বলতে পারি যে, যেকোনো কর্মজীবী মহিলা তার সাধ্যের সর্বোচ্চ পরিমাণ চেষ্টা করে পরিবারের তার স্বামী সন্তান বা অন্যান্য সদস্যদের জন্য রান্নাবান্না বা অন্যান্য ঘরোয়া কাজকর্ম করতে ও পরিবারকে সময় দিতে। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে চোখ বুলালে দেখা যাবে প্রায় ৮০% কর্মজীবী মহিলার পরিবারে সহযোগিতা বা সহমর্মিতা কম। অনেক স্বামীদের আবার এমন ভাব যে ‘তুমি চাকরি করছো তোমার পরিচিতির জন্য, না করলেও কি আমি সংসার চালাবো না? ঘর সংসার সামলাতে না পারলে চাকরি না করো।’ অনেক পরিবারে কর্মজীবী মহিলারা বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য নিকট আত্মীয় কাউকে পায় না। এমনও শুনেছি সারাদিন দুশ্চিন্তার মধ্যে অনেকে হয়তো কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করছে। আবার অনেকে গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে যাচ্ছে। দিনশেষে যখন ঘরে ফিরে যায় তখন পরিবারের সদস্যদের মুখে শোনা যায়, সে তো সারাদিন বাইরে ছিল, এখন ঘরে এসে তো বিশ্রামের সুযোগ নেই। রান্নাবান্না বাচ্চার পড়াশোনার তদারকি সবই করতে হবে। অথচ প্রায় সব কর্মজীবী নারীরা তাদের আয়ের সিংহভাগ পরিবারের প্রয়োজনে বা সন্তানের জন্য খরচ বা সঞ্চয় করেন। যে আয় বা সঞ্চয় পরিবারে অনেক বড় একটা সহযোগী ভূমিকা পালন করে। তাই প্রত্যেক কর্মজীবী নারীর প্রতি যদি পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতামূলক আচরণ করেন ও সহমর্মী হন তাহলে নারীরা অনেকটা মানসিক চাপমুক্ত হয়ে নিজের কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। পরিবারের সবার থেকে সহমর্মিতা পেলে সে শারীরিকভাবে অনেক সুস্থ থাকে। বেগম রোকেয়া বলেছিলেন ‘গরুর গাড়ির দুটো চাকা থাকে। গাড়ি ভালোভাবে চলতে হলে চাকা দুটোকে সমান হতে হবে। একটা ছোট আরেকটা বড় হলে সেই গাড়ি চলবে না।’ আমি মনে করি পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হলে নারীকে পুরুষের পাশাপাশি বাইরের কর্মক্ষেত্রে কাজ করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারে একজন কর্মজীবী নারীর জন্য সবার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একান্ত প্রয়োজন। আমরা চাই প্রত্যেক পরিবারে একজন কর্মজীবী নারী পরিবারের সকল সদস্য থেকে সমর্থন ও সহমর্মিতা পাক। নারীকে চলার পথে এগিয়ে দিন। তাহলে এগুবে পরিবার, সমাজ, দেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতার মান
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে