করোনা সাথে নিয়ে আসছেন বিদেশ ফেরত অনেকেই

ফের সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৩ মে, ২০২২ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে গত ৬ মে সস্ত্রীক দেশে ফিরেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। দেশে ফেরার পরপরই প্রথমে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভব করেন তিনি। পরে জ্বর আসে। সন্দেহ হওয়ায় পরদিন (৭ মে) করোনার নমুনা দেন।
ফৌজদারহাটের বিআইটিআইটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এর পরদিন (৮ মে) নমুনা পরীক্ষায় স্ত্রীরও করোনা পজিটিভ আসে। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। দেশে ফেরার আগে সৌদি আরবেই আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর। তিনি আজাদীকে বলেন, দেশে আসার পরপরই আমার শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তাই দেরি না করে নমুনা পরীক্ষা করাই। পরীক্ষায় পজিটিভ আসায় পরদিন স্ত্রীরও নমুনা নেয়া হয়। তারও করোনা পজিটিভ আসে। আমরা দুজনেই একসাথে ওমরাহ করে আসি। তাই ধারণা করছি, ওখানেই (সৌদি আরবে) হয়তো আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারি।

এদিকে, ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর মতো আরো অনেকেই বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে আসতে পারেন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যা নমুনা পরীক্ষা করালে ধরা পড়তো। কিন্তু সচেতন হওয়ায় ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী নমুনা পরীক্ষা করালেও অন্যরা তা করছেন না। এতে করে সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে শঙ্কার কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলছেন, ঈদের সময় বিশাল সংখ্যক বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গেছেন। অনেকে শপিংয়ে গেছেন। অনেকে ওমরাহ করতে গেছেন। অনেকেই সেখানে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। আবার আক্রান্ত হয়েও দেশে ফিরতে পারেন। দেশে ফেরার পর হয়তো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যারা সচেতন তারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগই দেশে ফেরার পর নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে করে একজনও যদি অন্য দেশ থেকে সংক্রমিত হয়ে আসেন, তার মাধ্যমে সংক্রমণ আবারো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে।

একই অভিমত চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীরও। তিনি বলেন, আমাদের মতো আরো অনেকেই এভাবে বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে আসতে পারেন। তাই বিমানবন্দর ছাড়াও নৌ ও স্থল বন্দরসমূহে পুনরায় পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। যাতে আক্রান্ত বা সন্দেহজনকদের আলাদা করা যায়। অন্যথা সংক্রমণ আবারো ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিদেশ ফেরত ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরসমূহে দীর্ঘদিন স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় কঠোরতা থাকলেও সামপ্রতিক সময়ে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এসব প্রবেশ মুখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন করোনা শনাক্তের সংখ্যা শূন্য থাকলেও গত ৯ ও ১০ মে টানা দুদিন একজন করে শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। পরদিন শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় দুজনে। তবে সর্বশেষ গতকাল আবারো শনাক্ত শূন্য চট্টগ্রাম। অন্যদিকে, দীর্ঘ দিন ধরে করোনায় মৃত্যু শূন্য দেখালেও গত ১০ মে রাতে করোনা আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর মৃত্যু হয়। চমেক হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত ওই মৃত্যুর খবর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রদত্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়নি।

তবে হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল বর্তমানে করোনা রোগী শূন্য বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সাসপেক্টেড রোগীও ভর্তি নেই বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, আক্রান্ত রোগী শূন্য হলেও সাসপেক্টেড ৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে চমেক হাসপাতালে। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালেও আক্রান্ত রোগী শূন্য। তবে সাসপেক্টেড ৩ জন রোগী ভর্তি থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত চট্টগ্রামের ৪৮৮১ প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধ২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সব বিষয়ে