করোনা আক্রান্ত ৫০ ভাগ রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতি

মৃত্যুর ৮০ ভাগই শ্বাসকষ্টের জটিলতায়।। চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে তিন চিকিৎসকের গবেষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

করোনা আক্রান্তদের মাঝে অন্তত ৫০ ভাগ রোগী নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতির (ডিফিকাল্ট ব্রেথিং) সম্মুখীন হয়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের ৮০ ভাগই শ্বাসকষ্টের জটিলতায় ভুগেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া করোনা রোগীদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের তিন চিকিৎসক যৌথভাবে এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তিন চিকিৎসক হলেন- চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া (আইসিইউ) বিভাগের মেডিকেল অফিসার বন্বী চক্রবর্তী। এছাড়া চমেক ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের চার জন শিক্ষার্থী এ গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন।
গবেষকরা জানান, গত বছরের (২০২০ সালের) এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে এ গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের মোট ৯৩ জন করোনা রোগীর উপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
গবেষণার সারমর্ম অনুযায়ী, ৯৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে আক্রান্তকালীন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতির (ডিফিকাল্ট ব্রেথিং) সম্মুখীন হয়েছে ৪৭ জন রোগী। যা মোট সংখ্যার ৫০.৫ শতাংশ। আক্রান্ত ৯৩ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। যাদের ১২ জনই শ্বাসকষ্টের জটিলতায় ভুগেছেন। অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের ৮০ ভাগই শ্বাসকষ্টের জটিলতায় ভুগেছেন।
চিকিৎসরা বলছেন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতি বা ডিফিকাল্ট ব্রেথিং হচ্ছে শ্বাসকষ্টের প্রাথমিক লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার আগে রোগীদের এমন অনুভূতি হয়। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব) মাপা হলে ওই সময় হয়তো তা বুঝা যায় না।
যার কারণে রোগীরা হাসপাতালে যাওয়ার তাড়না অনুভব করেন না। ঘরেই বসে থাকেন। পরে দেখা যায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে দেখা যায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেকটা কমে গেছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলে ওই রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে জানান গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. সুযত পাল। তিনি জানান, আক্রান্তদের মাঝে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৮০ থেকে ৮৬ এর মধ্যে। অর্থাৎ অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর নিচে নামলে ওই রোগীর মৃত্যু ঝুঁকিটা খুব বেশি। তাই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতি বা ডিফিকাল্ট ব্রেথিং দেখা যাওয়া মাত্রই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পালের।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাপ্ত বয়স্ক একজন ব্যক্তির ৯৪ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব) স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এর নিচে নামলে তা রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে ইঙ্গিত করে।
গবেষণা বলছে, ডিফিকাল্ট ব্রেথিং ছাড়াও করোনা আক্রান্তদের ৪৮ শতাংশ রোগী (৪৫ জন) দুর্বলতা ও অবসাদে ভুগেছেন। সর্দি-কাশির জটিলতায় ভুগেছেন ৬৫.৬ শতাংশ (৬১ জন) রোগী। আর আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ (৬৬ জন) রোগী জ্বরে ভুগেছেন। তাছাড়া ১৫ শতাংশ গলা ব্যথায় ও ডায়রিয়ায় ভুগেছেন ১৪ শতাংশ। মাংসপেশিতে ব্যথ্যা ও মাথা ব্যথায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ। বুকের ব্যথায় ৯.৭ শতাংশ, নাক দিয়ে সর্দি পড়া জটিলতায় ৯.৭ শতাংশ এবং স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়ার জটিলতায় ভুগেছেন ৯.৭ শতাংশ রোগী।
‘রোগের উপসর্গ এবং কোভিড সংক্রমণে মারাত্মকতার সম্পর্ক’ (ইনভেস্টিগেটিং দ্যা রিলেশনশীপ বিটুইন ক্লিনিক্যাল ফিচারস অ্যান্ড ফাটালিটি ইনফেকশনস ঃ রিপোর্ট ফ্রম টু কোভিড হসপিটাল) শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে উপস্থাপনের পর প্রবন্ধটি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগের চুক্তিতেই জাহাজ ভাড়া
পরবর্তী নিবন্ধআবারো বাতিল হলো সিইউএফএল’র মিঠা পানির দরপত্র