করোনায় লোকজ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে না যাই

রূপম চক্রবর্ত্তী | সোমবার , ২৬ জুলাই, ২০২১ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

লোকজ শিল্প আমাদের প্রাণের একটা অংশ। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে এই লোকজ শিল্প আর সংস্কৃতির অনেক উপাদান ছড়িয়ে আছে। মসলিন কাপড়, নকশী কাঁথার সৌন্দর্য্য এবং পদাবলী, বাউল গানের সুর আমাদের আকর্ষিত করে চলেছে।
কালক্রমে বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবে শিল্পের নিজস্ব ধারার পরিবর্তন ও বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। বিভিন্ন মানুষের রুচির কারণে এই সংস্কৃতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও অবয়বের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুণগত মানের পরিবর্তন হয়। সৌখিন লোকদের রস পিপাসা মেটাতে গিয়ে লোকশিল্প স্বকীয়তা হারায়। কারুবিপণির দৌরাত্ম্যের ফলে এই শিল্পে নাভিশ্বাস নেমে আসে, শিল্পের ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ায় শিল্পীরাও হারিয়ে ফেলে দরদ ও অনুভূতি। আমাদের অতীত লোকশিল্পের লালনক্ষেত্র আমাদের গ্রামবাংলা। অথচ এই গ্রামীণ সমাজ কাঠামোতে ফাটল ধরানো হয়েছে। এক শ্রেণির লোভী মানুষের কারণে লোকশিল্পের স্বাতন্ত্র্য ধারা ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের এই ঐতিহ্যে আর কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।আমাদের সমাজেও পরিবর্তন হচ্ছে বহুকাল ধরেই। গ্রাম এবং শহরে গড়ে উঠেছে বিশাল মধ্যবিত্ত সমাজ। সমাজ পরিবর্তনের এ-প্রক্রিয়ায় লোকশিল্পকলাও পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের লোকশিল্পের বর্তমান ধারার দিকে তাকালেই তা চোখে পড়ে। পরিবর্তন আর বিভিন্ন রকমের পরিমার্জনের ভেতরেও যেন আমরা লোকজ শিল্পকে খুঁজে পাই সেই প্রত্যাশা করছি। বিটার এক গবেষণায় দেখা যায় বিভিন্ন অঞ্চলে স্বভাবশিল্পী, নগরকেন্দ্রিক শিল্পীদের একাংশ করোনাকালীন সময়ে তাদের আয়-রোজগার সম্পূর্ণ হারিয়েছেন। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মৃৎশিল্পীদের তৈরিকৃত বিপুল পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী অবিক্রিত থাকাতে সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না শিল্পীরা। জীবিকার প্রয়োজনে এবং তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের আয়ের জন্য যেনতেন ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে শহরমুখী হয়েছেন। আবার নগরকেন্দ্রিক শিল্পী যারা বাসাবাড়িতে গান, তবলাসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ দিতেন দীর্ঘদিন করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে তাদের অধিকাংশই আয়হীন মানুষে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন লোকজ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো যেন প্রণোদনার আওতায় আসে সরকার অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। যারা বিত্তশালী আছেন তারা অবশ্যই বর্তমান দুর্দিনে লোকজ শিল্পে উৎপাদিত জিনিসপত্র ক্রয় করবেন। এতে করে অনেক মানুষের উপকার হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচারিত্রিক সনদপত্র ও চাকরিক্ষেত্রে এর ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত
পরবর্তী নিবন্ধ৭১’এর স্মৃতি কথা