করোনায় বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে শিক্ষা

স.ম জাফর উল্লাহ | বুধবার , ২৩ জুন, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব মহামারী করোনায় উন্নত অনুন্নত সকল দেশে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা উলোট পালট হয়ে গেছে। স্থবিরতা নেমে এসেছে সকল ক্ষেত্রে। উন্নত রাষ্ট্রে এ ভাইরাসের মোকাবেলার অসহায়ত্ব দেখে অনেক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য ছিল এ ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রান্ত হলে পথে ঘাটে পিঁপড়ার মত মানুষ মরে থাকবে। আমরা জানি উন্নত রাষ্ট্র অনুন্নত দেশ বা রাষ্ট্র থেকে সব দিকে দিয়ে এগিয়ে থাকে তেমনি ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দিক দিয়ে এরা অনুন্নত দেশ থেকে এগিয়ে থাকবে এটা স্বাভাবিক। এখানে হিসাবটা হয়তো উল্টো পথে হল আরকি। যাক মহান সৃষ্টি কর্তার অপার মহিমা করোনার ঢেউ এ দেশে আছড়ে পড়লে ও সকল ভবিষ্যত বাণী মতামত মন্তব্য অসাড় করে দিয়াছে করোনায় পরিণতি যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক নিরাপদ রয়েছে এদেশের মানুষের জীবন। বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে সরকার সকল ক্ষেত্রে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করায় জনগণের সচেতনায় করোনায় মারাত্মক ক্ষতি সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য যানবাহন জন সমাগম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি লক ডাউনের আওতায় করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। ২০ সালের মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রেণী কার্যক্রম যাবতীয় রক্ষা প্রাইভেট কোচিং সব কিছু বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে ব্যবসা বাণিজ্য যানবাহন গামের্ন্টস মার্কেট খুলে দিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নিয়েও পুনরায় তা থেকে সরে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল ও ব্যক্তি বিশেষ থেকে দাবি উঠলেও সরকার কোন এক অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে কর্ণপাত করছে না। সরকারের যুক্তি থাকতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এ যুক্তি খোঁড়া যুক্তি বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও ঐ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নাই। সরকার তড়িঘড়ি করে যা সামান্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা দেশ ও জাতির চাহিদায় খুবই ভঙ্গুর ও অপ্রতুল। অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রমে শহরের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারলেও গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ শিক্ষাক্রম ব্যয়বহুল বলে অনেকের জন্য এ ব্যবস্থা মরার উপর খঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ স্মার্ট ফোন যোগাড় করতে পারলে এমবি লোড করার অর্থ নেই। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন শ্রেণীক্রমে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের পর মোবাইল গেমস বা অন্য এ্যাপসে মগ্ন থাকে। এক বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে অমনোযোগ বা নিরুসাহিত হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আর্থিক কারণে নানা পেশা ও চাকরিতে জড়িতে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয় খুললে শিক্ষা জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। শিক্ষা এমন বিষয় যার ঘাটতি পূরণে এমন কোন প্রযুক্তি বা বিকল্প ব্যবস্থা এখনও উদ্ভাবন হয়নি। করোনায় দেশের শিল্প বাণিজ্য বা প্রবৃদ্ধির সূচক অন্যভাবে পুষিয়ে নিতে পারলেও শিক্ষার ক্ষতি পূরণের কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেক কাজে সাহসিকতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দেশের বিভিন্ন মহল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা উপদেশ প্রস্তাবনা গ্রহণ করতে বা নিজ উদ্যাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে কেন পারছেন না, তা বোধগম্য নয়। ইতিমধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক ও বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জোরালো দাবি উঠছে স্বাভাবিকভাবে না হলেও পরীক্ষামূলক পর্যায়ক্রমে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার বিধি বিধান মেনে খুলে দেয়া হোক এটাই জাতির প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবে নাগাদ খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?
পরবর্তী নিবন্ধবর্ষা রাগে