করোনাকালীন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে

| বুধবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট চলার মধ্যে নতুন মহামারি নিয়ে হুঁশিয়ার করলেন এবং তা মোকাবেলার প্রস্তুতিও রাখতে বললেন তিনি। গত ১১ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে মর্যাদাপূর্ণ র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী ফেরদৌসী কাদরীর বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত। তবে অনেক রকম রোগ আসতে পারে। আজ কোভিড-১৯ আছে, কাল অবশ্যই অন্য কিছু আসবে। এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কেন এই শঙ্কা, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমার্জিং প্যাথোজেন, যেটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা করি, নিপাহ, ডেঙ্গু পরিবর্তন সব জায়গায় হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়েল রেজিস্ট্যান্সও মারাত্মক জিনিস। একটা জীবাণু যদি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে কোনো ওষুধই কাজ করবে না। তখন চিহ্নিত রোগও মহামারী আকারে চলে যাবে। এমার্জিং এবং রি-এমার্জিং ইনফেকশন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় করতে গিয়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে। শুরুতে ৪-৫টা আরটি-পিসিআর ল্যাব ছিল, এখন এক হাজারের কাছাকাছি হয়েছে। আমরা এখন বায়োসেইফটি-২ তে কাজ করছি। বায়োহ্যাজার্ড নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব এই অবকাঠামো এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যেন থাকে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা থাকতে হবে। সংক্রমণের বিচারে দেশে বর্তমান পরিস্থিতি ভালো বললেও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আবার যে সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে, তা নিয়ে সতর্কও থাকতে বললেন তিনি। দেশে করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে টিকার সংকট পুরোপুরি কাটাতে দেশে টিকা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। বিশ্বে টিকার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তার ওপরও আলোকপাত করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহামারি মোকাবেলার সবচাইতে বড় ও সর্বপ্রথম অস্ত্র হচ্ছে, সেই ভাইরাসকে ভালোভাবে জানা এবং বোঝা। ভাইরাসটি কিভাবে সংক্রমিত হচ্ছে – মানে পানি, বাতাস, রক্ত নাকি স্রেফ মানুষে মানুষে সংস্পর্শেই সংক্রমিত হচ্ছে, তা কতখানি বা কি মাত্রার সংক্রামক, এর উপসর্গগুলো কী, এর মানুষকে মারার ক্ষমতা কেমন, কারা এই ভাইরাসের সামনে সবচাইতে অসহায়, মানে কোন বয়সের – কোন লিঙ্গের মানুষ বেশি ভার্নারেবল, পূর্বতন বিশেষ বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে সেই ভাইরাসের মৃত্যুহার বেশি কি না, আবহাওয়ার সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি না, চিকিৎসার ক্ষেত্রে – সরাসরি যেহেতু ভাইরাসকে মারার ওষুধ নেই এবং শরীরের ইম্যুউন ব্যবস্থা কখন ভাইরাসকে পুরোপুরি পরাস্ত করবে তার অপেক্ষা করা ছাড়া যেহেতু উপায় নেই সেহেতু- কোন উপসর্গের কি চিকিৎসা দরকার, ভাইরাসের আক্রমণের পাশাপাশি যদি অন্য কোন জীবাণু যেমন ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের ব্যাপার থাকে, তাহলে তার মোকাবেলায় কোন এন্টিবায়োটিক লাগবে, ভাইরাসের মিউটেশনের অবস্থা কী, নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট কেমন সংক্রামক, এদের মারণ ক্ষমতা কেমন … ইত্যাদি, ইত্যাদি– এসব নিয়ে যত ভালো ধারণা থাকবে, মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতি তত ভালো নেয়া সম্ভব!
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নানা বিশ্লেষণ হয়েছে- কার কী প্রস্তুতি ছিল, সক্ষমতা কী আছে আর ঘাটতি কোথায়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্য খাতের নানারকম সংকট বিশ্লেষকদের সামনে আসে। প্রথমদিকে পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ লাইন, ফল পেতে ভোগান্তি, হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ এবং জরুরি অক্সিজেনের ঘাটতি ছাড়াও সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যহত হয়েছে। এছাড়া শুরুতে চাহিদার তুলনায় জরুরি সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট যেমন দেখা যায় এ নিয়ে বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমাদের জনস্বাস্থ্য বিভাগটি কোনো মহামারি মোকাবেলার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। একেবারেই সামর্থ্যহীন ছিল। কারণ আমরা কাগজেকলমে যে পরিকল্পনা করেছিলাম মহামারি প্রতিরোধের জন্য, এটি যখন বাস্তবায়িত করতে যাই আমরা দেখেছি তার একটি বড় অংশই বাস্তবায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনা পরবর্তীকালে জনস্বাস্থ্যের ওপরে জোর দিয়ে নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে। এটাই আমাদের জন্য বড় একটা শিক্ষা।
এ কথা ঠিক যে, মহামারি চলাকালীন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে। তা অনেকের কাছে দৃশ্যমান। পরীক্ষার ল্যাব থেকে শুরু করে করোনার চিকিৎসা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা এবং ব্যবস্থাপনায় এ উন্নতি হয়েছে। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে আগামীতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে