কমিটি সংস্কার চায় পদবঞ্চিতরা, বার বার আন্দোলন অবরোধ

চবি ছাত্রলীগ

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে ‘সংস্কার’ চেয়ে আন্দোলন করে আসছে উপ গ্রুপগুলো। কমিটিতে স্থান পাওয়া ৯৪ জন সদস্য অনাস্থাও প্রকাশ করেছেন শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি। কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দফায় দফায় অবরোধ, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রধান ফটক আটকিয়ে অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পদবঞ্চিত আন্দোলনকারী নেতাকর্মীরা। তিন দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের হুঁশিয়ারিও দেয় আন্দোলনকারী উপগ্রুপগুলো।
তাদের দাবিগুলো হলো, পদবঞ্চিতদের মূল্যায়ন করে ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের যোগ্যতা অনুসারে পদগুলোর পুনঃমূল্যায়ন এবং কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরিজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়দের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠিত কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছাত্রলীগের কোনো গঠনতন্ত্র না মেনে ৪২৫ সদস্যের একটি ঢাউস কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়েও সঠিক তথ্য দিতে পারেননি শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। প্রথমে ৩৭৬ সদস্যের নাম দেখা গেলেও কয়েক ঘণ্টা পর আরও ৪৯ জনের নাম সহ ছাত্রলীগের প্যাডের দুইটি পাতা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া শতাধিক ‘বিতর্কিত’ স্থান পেয়েছে কমিটিতে। রয়েছে অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত, বিভিন্ন মামলার আসামি ও জামায়াত-বিএনপি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
একই নাম রয়েছে একাধিক পদে। আবার একই পদ নিয়ে রয়েছে দুইজন দাবিদার। কমিটি ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
৩১ জুলাই মধ্যরাতে কমিটি ঘোষণার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় উপগ্রুপ বিজয়। তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে যোগ দেয় সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বাধীন সিএফসি উপগ্রুপ। তারা উভয়ই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী। কয়েক ঘণ্টা পরে সিএফসি সরে আসলেও বিজয় আন্দোলন চালিয়ে যায়। দুইদিন ক্যাম্পাস অচল রেখে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষা উপমন্ত্রীর হুঁশিয়ারে আন্দোলন স্থগিত করে তারা।
এরপর ১০ আগস্ট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেন নবগঠিত কমিটির ৯৪ জন নেতাকর্মী। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে তিন দফা দাবি ও দাবি না মানলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারির কথাও জানান তারা। এতে শাখা ছাত্রলীগের সাতটি উপগ্রুপ ভার্সিটি এঙপ্রেস (ভিএঙ), রেড সিগন্যাল (আর এস), একাকার, বাংলার মুখ, কনকর্ড, এপিটাপ ও উল্কার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরা সবাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত কমিটির দাবিতে শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেন তারা। এর একদিন পর একই স্থানে বর্ধিত কমিটির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। সর্বশেষ গতকাল রবিবার বিক্ষোভ মিছিল করে সাতটি উপগ্রুপ। পরে মূল ফটক আটকিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয় ফটক।
উপগ্রুপের নেতাদের বক্তব্য : রেড সিগন্যালের নেতা রাকিবুল হাসান দিনার বলেন, দীর্ঘ ৩ বছর পর গত ৩১ জুলাই রাতে চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় নিয়ে ঘোষিত কমিটি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মন জয় করতে পারেনি। উল্টো নিষ্ক্রিয় ও জামায়াত-বিএনপি পরিবারের ছেলেদের স্থান দিয়ে কমিটিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এর প্রতিবাদে ৩ দফা দাবিতে আমরা নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছি এবং সুশৃঙ্খল আন্দোলনের মাধ্যমে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। দাবি আদায় না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ভিএঙ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, আমরা এ সব আন্দোলনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দিচ্ছি। দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করা হবে। আশা করি, আমাদের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়গুলো সমাধান করবে। এপিটাপ নেতা সাজ্জাদ আনাম পিনন বলেন, আমার গ্রুপ থেকে বাছাই করে যোগ্য ১০ জনের নাম জমা দিয়েছিলাম। এটা দিয়েছি ১৫১ সদস্যের কমিটি হিসাব করে। সেই জায়গায় ৪২৫ জনের কমিটি করেও মাত্র ৪ জনকে পদ দেওয়া হয়েছে। এত বড় কমিটি যেখানে অনেক অযোগ্য ও বিতর্কিত স্থান পেয়েছে। আমরা এর সমাধান চাই। আমাদের তিনটি দাবি না মানলে আমরা বিরতিহীন আন্দোলনে যাব।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য : এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আজাদীকে বলেন, কমিটি বর্ধিত হলে আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই। আরো অনেকে পদ পাবে, কর্মী বাড়বে। কিন্তু এটা তো একটা প্রক্রিয়ার বিষয়। আমরা কাজ করছি। সকলের সাথে সমন্বয় করে যেটা ভালো হয়; করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় ২৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
পরবর্তী নিবন্ধচবির মূল ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে ছাত্রলীগের দুই ঘণ্টা অবস্থান