কমপ্লেক্সের স্থান নির্বাচন নিয়ে রশি টানাটানি

নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ৫ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার জেলার নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) প্রস্তাবিত স্থানেই স্থাপনের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ‘ঈদগাঁও উপজেলার সচেতন নাগরিকে’র ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঈদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সদরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন ঈদগাঁও উপজেলা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিকারের সভায় এ উপজেলার সদর দপ্তর সকলের সুবিধার্থে ঈদগাঁও ইউনিয়নের চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন ঈদগাঁও কলেজের পার্শ্ববর্তী খালি জমিতে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন উপজেলা সদর দপ্তর স্থাপনের বিধিমালায় বলা আছে, এমন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে যেখানে কাছাকাছি বিভিন্ন সরকারিবেসরকারি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, স্কুল, কলেজ রাস্তা, হাটবাজার, ব্যাংক, বীমা ও সরকারি হাসপাতাল ইত্যাদি সুবিধা থাকে। কলেজের পাশের প্রথম প্রস্তাবিত জায়গাতে নাগরিক প্রায় সুযোগসুবিধা বিদ্যমান। এটি পছন্দ করে নিয়মিত অফিস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত জায়গার প্রতিবেদন চেয়ে স্থানীয় সরকার শাখা কঙবাজার হতে একটি চিঠিও ইস্যু করা হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক এক পদস্থ কর্মকর্তা নিকারের সিদ্ধান্তের তথ্য গোপন করে তার পৈত্রিক বাড়ির পাশে তিন ফসলী জমিতে উপজেলার প্রশাসনিক ভবন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন। যা স্থানীয় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির সুরাহা চেয়ে এখন উচ্চ আদালতে মামলা ঝুলছে।

তিনি বলেন, প্রথম জমির বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়ার প্রায় এক মাস পর স্থানীয় সরকারের উচ্চ পদে থাকা (বর্তমানে সাবেক হয়েছেন) ইসলামাবাদ ইউনিয়নের এক ব্যক্তির ইশারায় তারই দুই প্রতিবেশীকে উপজেলার স্থান নির্ধারণ বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি আবেদন করান। সেখানে তারা লিখেন, ইসলামাবাদের গর্বিত সন্তান হিসেবে ইসলামাবাদ রেল স্টেশনের পাশে ১০ একর ধানি জমিতে উপজেলার প্রশাসনিক ভবন স্থাপনের ব্যবস্থা করলে আপনার গৌরবের পাশাপাশি এলাকাবাসী উপকৃত হবে এবং ইউনিয়নের সন্তান হিসেবে যুগ যুগ আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম অভিযোগ করে বলেন, এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পূর্বের ফাইল থেকে ডিজিটাল ট্রেস ও ১৫ সেপ্টেম্বরের চিঠি সরিয়ে ১১ অক্টোবর জেলা প্রশাসককে ইসলামাবাদে স্থান নির্ধারণ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে পত্র দেয়া হয়। এরপরই শুরু হয় রশি টনাটানি। তিনি বলেন, আমরা চাই, মূল ভবনটি নিকার প্রস্তাবিত স্থানে হয়ে সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগগুলো আশপাশের ইউনিয়নে গড়ে উঠুক।

এদিকে, ঈদগাঁও উপজেলার নতুন প্রশাসনিক ভবন গড়ার জটিলতা নিরসনকল্পে কঙবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) একটি মতামত দিয়েছে। কউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগ হতে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দেয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, নবসৃষ্ট ঈদগাঁও উপজেলা বিদ্যমান মহাপরিকল্পনা এলাকার বাইরে। কিন্তু কউকের অধিক্ষেত্রের আওতাধীন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঈদগাঁও ইউনিয়নের প্রস্তাবিত সাইট চট্টগ্রামকঙবাজার মহসড়ক সংলগ্ন। সাইটের পারিপার্শ্বিক ভূমি ব্যবহারের মধ্যে থানা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম এবং বাণিজ্যিক (শপিংমল, বাজার, ব্যাংক ইত্যাদি) ভূমি ব্যবহারের আধিক্য লক্ষ্যণীয়। ঈদগাঁও ইউনিয়নের প্রস্তাবিত সাইট ঈদগাঁও স্টেশন হতে প্রায় ৫০০ মিটারে এবং ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ হতে নিকার প্রস্তাবিত ঈদগাঁও স্টেশন সংলগ্ন জায়গাটি নবসৃষ্ট উপজেলার অনেকটা মাঝামাঝি অবস্থিত। যা নবসৃষ্ট উপজেলাবাসীর জন্য সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহজতর এবং উপজেলাবাসীকে দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের প্রস্তাবিত সাইট চট্টগ্রামকঙবাজার মহসড়ক হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে। ভূমির মাঝে কৃষি ব্যবহারের আধিক্য থাকায় প্রশাসনিক ভবন করতে গেলে শ্রেণি পরিবর্তন আবশ্যক। এতে ইউনিয়নের কৃষি নির্ভর জনগণের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইসলামাবাদের প্রস্তাবিত স্থানটি নিকটবর্তী ঈদগাঁও রাবার ড্যামের সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত প্রায় ৮০০ হেক্টর কৃষি জমির আওতাধীন। ফলে উক্ত স্থানে উপজেলার প্রশাসনিক দপ্তর সমূহ প্রতিষ্ঠা করা হলে রাবার ড্যাম দ্বারা সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত জমির পরিমাণ হ্রাস পাবে, কমে যাবে রাবার ড্যামের উপযোগিতাও। তাই উপজেলা কমপ্লেঙ স্থাপনে ঈদগাঁও ইউনিয়নের সাইটটি ইসলামাবাদের প্রস্তাবিত সাইটের চেয়ে অধিক উপযুক্ত।

সংবাদ সম্মেলনে ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী জাফর আলম, মুহাম্মদ ছৈয়দ, এহেসান বাবুল, মুহাম্মদ ইউনূস কোম্পানী, মুহাম্মদ আবু ছালেহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১১৭তম সভায় কঙবাজার সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়ন; পোকখালী, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও ঈদগাঁও নিয়ে নতুন ঈদগাঁও উপজেলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি ঈদগাঁও থানার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ১২৬ দশমিক ৩২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নতুন ঈদগাঁও থানার জনসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ৫
পরবর্তী নিবন্ধজরিমানা প্রদান ও প্রতিশ্রুতির পর খুলে দেয়া হলো সেই মিল