কবি আশীষ সেন-এর ‘তোমারি জন্য ভাসিয়েছি ভেলা’

শহিদ হাসান | রবিবার , ৬ জুন, ২০২১ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সত্তর দশকের কবি আশীষ সেনের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নন্দনকাননস্থ গোলাপ সিংহ লেইনে। তাঁর পিতার নাম মনিন্দ্র চন্দ্র সেন আর মাতার নাম রেনুকা সেন। কবি আশীষ সেন মেধায়, মননে আর চেতনায় সমুজ্জ্বল এবং সবর্দা প্রাণময় এক কবি ব্যক্তিত্ব। তাঁর চিন্তার গহীন প্রদেশে উজানের স্রোতের মতো কবিতার পংক্তিমালা ঢেউ তোলে। শয়নে-স্বপনে-জাগরণে এসব পঙ্‌ক্তি তার চিত্তকে অস্থির করে তোলে কবিতার স্বরূপে প্রকাশের উত্তেজনায়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ এক ক্লান্ত পদাতিক প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালে। সুদীর্ঘ বিরতির পর ২০২১ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তোমারি জন্য ভাসিয়েছি ভেলা’।
কবি আশীষ সেনের কবিতা সম্পর্কে কবি ও সাংবাদিক প্রদীপ খাস্তগীর বলেন, ‘কবি আশীষ সেন- কবিতা লালন করেন মননে, জানেন এবং বুঝেন কবিতার ভাষা।
কবি আশীষ সেনের কবিতা সম্পর্কে ঐতিহাসিক ও প্রকাশক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সত্তর দশকের কবির প্রথম প্রেম কবিতার সাথে- সেই থেকে আজও কবির প্রেম অটুট; এবার দেখা যাক, কবি আশীষ সেনের কবিতার গতি প্রকৃতি ও বিন্যাস
১. রাস্তাটা পিচ্ছিল/ চলতে গিয়ে…./ বার বার পা পিছলে পড়ে যাই।
(গন্তব্য: পৃ: ৭, তোমারই জন্য ভাসিয়াছি ভেলা)
এ কবিতায় ইঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন বর্তমানে অস্থির সময়ের রূপরেখা। তবুও ছেলেটা মানে কবি বুকের সাহসের পরিধি বাড়িয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বেলা যাচ্ছে শেষ হয় না বক্ররেখার পথ।
২. “… কি করলে বলে ফিরবে- অমৃত হাসিটুকু/ জানি তুমি এখনো রয়েছো ডাহুকের মতো উদাস।
(চুম্বন-৩: পৃ: ১০ ঐ)
আজকের প্রেক্ষাপটে জনসাধারণে মুখের হাসি মুছে গেছে। নানারকমের অসঙ্গতি প্রতিনিয়ত দরজায় কড়া নাড়ে। এদেশের মানবসমাজ সুস্থির থাকতে পারে না। অস্থিরতাকে ভোলার জন্য ডাহুকের মতো উদাস হয়ে যায় দিন-দুপুরে। হায়রে অমূল্য জীবন কালো সময়ের কারণে আজ মূল্যহীন।
৩. এই সোনালী হেমন্তে কাটা হবে ধান/ বিজয়া, মনে পড়ে প্রভাতি রোদ্দুরে…/ হরিৎ ঘাসে বসে নামতা পড়া সুর করা/কৈশোরে।”
(কুসুমিত ইস্পাতা: পৃ- ১৪, ঐ)
কবি আশীষ সেনের অন্ধকার সময় থেকে মুখ ফিরিয়ে ফেলে আসা কৈশোরে দিক ফিরে তাকিয়েছেন। তাঁর প্রভাতে রোদে সবুজ ঘাসে চেপে নামতার পড়ার কথা মনে পড়ে। কবির এই কবিতা পাঠ করে পাঠকেরও নামতা দৃশ্য অবশ্যই মনে পড়বে। এখানে কবির সার্থকতা।
কবি আশীষ সেন সহজ-সরল ও পরিচিত শব্দ দিয়ে কবিতার শরীর নির্মাণ করেন। শব্দের অর্থ জানার জন্য পাঠককে অভিধানের পাতা উল্টাতে হয় না। এবার পাঠকের জন্য ‘তোমারি জন্য ভাসিয়েছি ভেলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কটি কবিতার পংক্তি তুলে দিলাম-
১. স্মৃতির শহরে আমি বারবার/ স্মৃতি ভারাক্রান্ত…/এক ক্লান্ত পদাতিক।’
(ক্লান্ত পদাতিক: পৃ: ২৩, ঐ)
২. তোমার আহ্বানে বৃষ্টি আসে/ স্পর্শটুকু- ভালোবাসার মতন, / মাতাল ধরণীতে নেমে আসে/ সোনালি ফসলের উৎসব।”
(প্রেম জাগে: পৃ: ২৫, ঐ)
৩. কাল তাকে দেখি নাই, আমি তার চুলে/ স্পর্শ রাখি নাই।”
(অনিতা: পৃ: ৩০ ঐ)
এ ধরনের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এ কাব্যগ্রন্থে আরো অনেক পংক্তি রচনা করেছেন কবি আশীষ সেন।
সর্বশেষে কবি ও সাংবাদিক প্রদীপ খাস্তগীরের ভাষায়, “প্রেম-অপ্রেমের ব্যঞ্জনা, প্রাণ-প্রকৃতির রাগ-অনুরাগের সমন্বয়ে কবি আশীষ সেন কবিতায় সংসার পাতেন নিরন্তন।”
আশাকরি ‘তোমারি জন্য ভাসিয়েছি ভেলা’ কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের হৃদয় হরণ করবে। বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি তাপস চক্রবর্তী, মূল্য- ২০০ টাকা মাত্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজৈব সুরক্ষা বলয় ভাঙ্গায় তদন্তের মুখে সাকিবরা
পরবর্তী নিবন্ধতুমি এলে