কবিতার বিশুদ্ধ কথামালায় রুখতে হবে সাম্প্রদায়িকতা

শিল্পকলায় কবিতা উৎসব

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

আমাদের চেতনার উপরে যারা আঘাত করে, আমাদের মুক্ত চিন্তার গায়ে যারা অস্ত্রাঘাত করে, তাদের বিরুদ্ধে পরিবার থেকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা এমন এক লগ্নে এসে দাঁড়িয়েছি, আঘাত এসে প্রত্যাঘাত করার শক্তিটা তৈরি করে দিচ্ছে। এটাই আমাদের উদ্যমের ব্যাপার। আমার বাংলাদেশকে কোনো অবস্থাতেই অন্ধকারে ঢেকে দেওয়া যাবে না এবং আমরা সেটা মানবো না। এখানেই আমাদের স্বপ্নের সার্থকতা।
বাচিক শিল্প চর্চা কেন্দ্র ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ সে চেষ্টা-ই করে চলেছে জন্মলগ্ন থেকে। আপন আলোয় শুদ্ধ হওয়ার আহ্বানে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস জন্ম থেকেই তিমির বিনাশী আলো হতে চেয়েছে। বারবার মঞ্চে ও কবিতায় উচ্চারণ করতে চেয়েছে সমতার বিশুদ্ধ নিয়ম। কবিতা কখনো কখনো অস্ত্র হয়ে উঠে। সেই অস্ত্র নিয়ে কবির পাশাপাশি সুস্থ সাংস্কৃতিক সংগ্রাম চালিয়ে যান আবৃত্তি শিল্পীরা। আজ দেশজুড়ে একধরনের অবক্ষয় চলছে। বিভাজনের এ সংকটে তরুণ প্রজন্মের কেউ ইতিবাচক, কেউ নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ। এই রুক্ষ সময়ে কবিতার শুদ্ধ কথামালার মধ্য দিয়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস অসাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীহীণ সমাজ বিনির্মাণে সংগ্রাম করে চলেছে। গতকাল ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশের অন্যতম বাচিক শিল্প চর্চার সংগঠন ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ এর আয়োজনে দুই দিন ব্যাপী কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এ অভিমত ব্যক্ত করেন। কবিতার শহর চট্টগ্রামে গত চার বছরের ধারাবাহিকতায় পঞ্চমবারের মতো আয়োজন করা হয় দুই দিন ব্যাপী কবিতা উৎসবের।
উদ্বোধনের পর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী উদ্বোধনী বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের শিল্পীরা। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সদ্য প্রয়াত কবি অরুণ দাশগুপ্ত, কবি খালিদ আহসান এবং কবি শাহিদ আনোয়ারের প্রতিকৃতিতে। উল্লেখ্য, দুইদিনের এ কবিতা উৎসব তাঁদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়।
তারুণ্যের উচ্ছ্বাস সভাপতি কবি ভাগ্যধন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী সভায় অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাস কবিতা উৎসব উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক, জনপ্রিয় উপস্থাপক ও আবৃত্তি শিল্পী শারমিন লাকী এবং তারুণ্যের উচ্ছ্বাস উপদেষ্টা ডা. আলী আজগর চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি প্রবীর মহাজন।
অতিথিবৃন্দ বলেন, কবিতার শক্তি অসাধারণ। কবিতার বিশুদ্ধ কথামালা আমাদের পরিশুদ্ধ করে। সাম্প্রদায়িকতা রুখতে কবিতার বিশুদ্ধ কথামালা ছড়িয়ে দিতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বাংলাদেশে আবৃত্তির ইতিহাস আজকের নয়, দীর্ঘ কালের। এখন সে আবৃত্তি একটি সংঘবদ্ধ রূপ নিয়েছে। আবৃত্তির ভেতর দিয়ে আমরা সুস্থ মননশীলতার চর্চা করবো, বিশুদ্ধ চেতনা এবং পরিপূর্ণ, স্বচ্ছ আত্মার চর্চা করবো। ভালো ভাষাকে যদি ভালোবাসা যায় তাহলে আত্মা শুদ্ধ হয়।
দুইদিনের এ আয়োজনের প্রথম দিনে আবৃত্তিশিল্পী শ্রাবণী দাশগুপ্তার সঞ্চালনায় আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তি শিল্পী শারমিন লাকী, অঞ্চল চৌধুরী, মিলি চৌধুরী, প্রণব চৌধুরী, লুবাবা ফেরদৌসি সায়কা, রেখা নাজনীন, সঞ্জীব বড়ুয়া, বনকুসুম বড়ুয়া, শাহরীয়ার তানজিম, শাহাদাত হোসেন, শাহেদুল ইসলাম এবং শামীমা ইয়াসমিন। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি আকতার হোসাইন, স্বপন দত্ত, পুলক পাল, সাজিদুল হক, রিজোয়ান মাহমুদ, নাজিমুদ্দীন শ্যামল, হোসাইন কবির, সাথী দাশ, আলী প্রয়াস, নিশাত হাসিনা শিরিন, মোহাম্মদ জোবায়ের, বিদ্যুৎ কুমার দাশ, কমলেশ দাশগুপ্ত। ছড়াপাঠ করেন ছড়াকার অরুণ শীল, আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, জসীম মেহবুব, উৎপল কান্তি বড়ুয়া এবং আবুল কালাম বেলাল।
আজ উৎসবের দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনের আয়োজন শুরু হবে সকাল ১০টায়। সকালে রয়েছে কবি-ছড়াকার-আবৃত্তিশিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী সম্মিলন। বিকেলের আয়োজনে থাকছে কবিতার মিছিল শিরোনামের শোভাযাত্রা। এরপর রয়েছে উৎসব সমাপনী এবং ‘শান্তনু বিশ্বাস স্মৃতি প্রণোদনা’ প্রদান অনুষ্ঠান। এবছর প্রণোদনা পাচ্ছেন নন্দিত আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী মুবিদুর রহমান সুজাত। এ পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন দেশবরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের সদস্য সচিব অধ্যাপক রূপা চক্রবর্ত্তী, নাট্যজন শিশির দত্ত, নাট্যজন শুভ্রা বিশ্বাস এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু। এদিন সারাদেশ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করবেন। দুইদিনের এ উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন, চট্টগ্রাম, বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপ, ম্যাঙ গ্রুপ এবং এসকেএফ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবারইপাড়া খাল খনন শুরু হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী দুই ভাই গ্রেপ্তার