কন্টেনার ডেলিভারি অর্ডার ইস্যু হবে এক ক্লিকেই

বন্দরের ইতিহাসে এটিই প্রথম গতিশীল হবে সার্বিক কার্যক্রম

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের শত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার (ইডিও) শুরু হচ্ছে। আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে ইডিও চালু হচ্ছে। ছয়টি মেইন লাইন অপারেটরকে (এমএলও) কন্টেনার খালাসে ইডিও ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ৫০ শতাংশেরও বেশি কন্টেনার উক্ত ছয়টি কন্টেনার লাইন্স পরিবহন করে থাকে। শিপিং বাণিজ্যের ডিজিটাল দুনিয়ার সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার খালাসে গতিশীলতার পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে। এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস করে নিয়ে যাওয়া শতভাগ রোধ হবে। নতুন এই প্রযুক্তিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি মাইলফলক বলেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশেরও বেশি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। এই কার্যক্রমের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো বন্দর থেকে সঠিকভাবে ডেলিভারি দেয়া একটি বড় বিষয়। কন্টেনার ডেলিভারি প্রক্রিয়ার সাথে নানা ধরনের কাগজপত্র ও কার্যক্রম জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করতে হয় তা হচ্ছে আমদানিকারকদের প্রতিনিধি হিসেবে সিএন্ডএফ এজেন্টদের দফায় দফায় শিপিং কোম্পানির অফিসে গিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিয়ে ডেলিভারি অর্ডার সংগ্রহ করতে হয়। ওই ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে বন্দরে গেলে কন্টেনার খালাসের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ম্যানুয়েলি এসব কাজ করতে গিয়ে বহু শ্রম ও লোকবল জড়িত। সিএন্ডএফ অফিসের লোকজনকে দফায় দফায় শিপিং কোম্পানির অফিসে যেতে হওয়ায় নানাভাবে বহু সময় নষ্টের পাশাপাশি বাড়তি অর্থও খরচ হয়। এছাড়া শিপিং এজেন্সি, ফ্রেইট ফরোয়াডার্সের লোকজনকেও নানাভাবে সময় এবং শ্রম দিতে হয়। এ অবস্থার অবসানে সিঙ্গাপুরসহ উন্নত বিশ্বের বন্দরগুলোতে বেশ কয়েক বছর আগ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার বা ইডিও’র প্রচলন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় সব কার্যক্রমই সম্পন্ন হবে অনলাইনে। সিএন্ডএফ এজেন্সির একজন প্রতিনিধিকে শুধুমাত্র একবার যেতে হবে শিপিং লাইন্সের অফিসে। বাকি সব কাজই পরিচালিত হবে অনলাইনে। চট্টগ্রাম বন্দর একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করে দেবে, যেখানে শিপিং লাইন্স ও সিএন্ডএফ এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টরা নিজেদের আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে কন্টেনার ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডারের এই প্রক্রিয়ায় শ্রম, সময় ও লোকবল কম লাগবে। যা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা তৈরি করবে।
প্রাথমিকভাবে ছয়টি শিপিং লাইন্সকে এই কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজারের দফতর থেকে গতকাল জারিকৃত স্মারক মূলে উক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এপিএল বাংলাদেশ লিমিটেড, মার্কস বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স বিডি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স, ওশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এমএসসি মেডিটেরিয়ান শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ইডিও চালুর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব মেইন লাইন অপারেটরের মাধ্যমে বন্দরে বছরে ছয় লাখেরও বেশি আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ডেলিভারি দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে চট্টগ্রাম বন্দরেই প্রথম এই ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এটি অনেক বড় একটি অর্জন বলেও তাঁরা মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘে অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধএবার আসছে অটোমেটিক ভাড়া অবহিতকরণ অ্যাপস