বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানে পরিচালক প্রদীপ ঘোষ এবং রিফাত মোস্তফা টিনা প্রযোজিত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা‘ এর উপর ভিত্তি করে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্র তৈরি হয়। চট্টগ্রামের জে এম সেন হলে অধ্যক্ষ রীতা দত্ত দিদিমণি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্রটি দেখে আমাদেরকে স্কুলে এসে বললেন অসাধারণ একটি ছবি। তোমরা দেখো। উনার কাছে শুনে আমরা শিক্ষিকারা ১৪ই ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি দেখলাম। সত্যিই অসাধারণ। সবার অভিনয় এতো নিখুঁত যেন আমরা কিছু সময়ের জন্য সেই ব্রিটিশ শাসন আমলে ফিরে গেলাম। চমৎকারভাবে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রীতিলতার বাবার চরিত্রে সঞ্জীব বড়ুয়া স্যারের অভিনয় বেশ ভালো লাগলো। আমরা মুগ্ধ হয়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ছবিটি উপভোগ করলাম।
প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার ছিলেন ভারতের প্রথম শহীদ নারী বিপ্লবী। ১৯১১ সালের ৫ই মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের এক মধ্যবিত্ত বৈদ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জগবন্ধু ওয়েদ্দেদার ছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভার একজন কেরানি এবং মা প্রতিভাময়ী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। প্রীতিলতার ডাকনাম ছিল রানী। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন বিপ্লবী সংগঠনে যোগদানের প্রেক্ষিতে তিনি ধলঘাট ক্যাম্পে মাস্টারদা সূর্য সেন এবং নির্মল সেনের সাথে দেখা করেন। ১৯৩০ সালের ২ ডিসেম্বর বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তী ভুল করে ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এসপি এবং তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করেন। সেই রাতেই তাঁরা গ্রেপ্তার হন। প্রীতিলতা বোনের পরিচয়ে প্রায় ৪০ বারের মতো কলকাতার আলিপুর জেলে রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করেন। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সাথে প্রীতিলতা টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসে আক্রমণ এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখলের মত অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে বীরকন্যা প্রীতিলতা মাত্র ২১ বছর বয়সে আত্মাহুতি দেন পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে। তখন তিনি পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। তাঁর মৃতদেহ তল্লাশি করে পুলিশ কয়েকটি লিফলেট, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি, গুলি, বাঁশি এবং তাদের আক্রমণের পরিকল্পনার খসড়া পায়।
এই বাংলায় সেই সাহসী বীরদের ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে যদি আরো ছবি তৈরি করা হয় তাহলে ভবিষ্যৎ বংশধরেরা সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। দেশের প্রতি তথা মানুষের প্রতি কর্তব্য ও মানবিক বোধ জাগ্রত হবে। আমরা আজ স্বাধীন দেশে বাস করছি। কিন্তু দুইশত বছরের ব্রিটিশ শাসন আর প্রায় পঁচিশ বছরের পাকিস্তান শাসন –শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য কতো বীর দেশকে ভালোবেসে নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়ে গেছেন। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের চরণে নোয়াই মাথা।