কতটা সময় স্বাস্থ্যবান কর্মক্ষম থাকছেন, সেটাও দেখার বিষয়

দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি

| বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর ৮ মাস। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭১ বছর ২ মাস, আর নারীদের ৭৪ বছর ৫ মাস। এর আগের ২০১৯ সালের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ৬ মাস। গত ২৯ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০’ হালনাগাদ জরিপে নতুন এ তথ্য এসেছে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের জন্মহার কিছুটা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে মোট পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার। ২০২০ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৮ বছর, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। দেশে গড় আয়ু ২০১৮ সালে ৭২ দশমিক ৩ বছর, ২০১৭ সালে ৭২ বছর এবং ২০১৬ সালে ৭১ দশমিক ৬ বছর। প্রত্যাশিত গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি। ২০২০ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭১ দশমিক ২ বছর। ২০১৯ সালে ছিল ৭১ দশমিক ১ বছর। ২০১৮ সালে ৭০ দশমিক ৮ বছর, ২০১৭ সালে ৭০ দশমিক ৬ বছর এবং ২০১৬ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ বছর। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭৪ দশমিক ৫ বছর, ৭৪ দশমিক ২ বছর, ৭৩ দশমিক ৮ বছর, ৭৩ দশমিক ৫ বছর এবং ৭২ দশমিক ৯ বছর। জরিপকালীন তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩০ জন হয়েছে। আগের বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৩২ জন। এর ৫৪ শতাংশ পল্লী এলাকায় আর ৪৬ শতাংশ শহরে।
বিশেষজ্ঞরা গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয় অবদান রেখেছে বলে উল্লেখ করেন। এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশু মৃত্যু হ্রাস, মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি, ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়া, চিকিৎসাসেবার উন্নতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি প্রভৃতি।
গড় আয়ু বাড়ার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস। বিবিএস’এর জরিপ অনুযায়ী, ২০০১ সালে যেখানে বাংলাদেশে নবজাতক মৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১০০০ জন জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে ৫৬ জন, ২০১৭’তে এসে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ জনে। পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০০১ এ ছিল ৮২ জন, যা ২০১৭’তে কমে দাঁড়ায় ৩১ জনে। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের উন্নতি শিশু মৃত্যুহার কমানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত ১৩ বছরে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার হিসেবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৯.২ শতাংশ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হিসেবে বিবেচিত হতো। ২০১৭ সালে ৩৯ শতাংশের বেশি পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত কয়েকদশকে বাংলাদেশে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত মানুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি। মানুষ বেশি দিন বাঁচতে চায়। এখন এ দেশের মানুষের বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গড় আয়ু স্বাস্থ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। শিশুস্বাস্থ্য, মাতৃস্বাস্থ্য, পুষ্টি পরিস্থিতি, মোট প্রজনন হার-এ ধরনের বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে ভালো করেছে বলে গড় আয়ু বেড়েছে।
গড় আয়ু বৃদ্ধি একদিকে যেমন সম্ভাবনার, অন্য দিকে শঙ্কার বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, গড় আয়ু বাড়ছে ঠিকই কিন্তু এ দীর্ঘ সময় একজন মানুষ কতটা সুস্থভাবে জীবনযাপন করছে সেটাই বড় প্রশ্ন। একজন মানুষ ৭২ বছর বাঁচলেন, ভালো কথা কিন্তু এই ৭২ বছরে যাপিত জীবনে তিনি কতটা সময় স্বাস্থ্যবান কর্মক্ষম হয়ে বেঁচেছেন সেটা মূল কথা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে