কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা দরকার

| রবিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

 

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল, কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এতে বলা হয়েছে, কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একশ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআরে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট দেখাতে হবে। সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং শিল্প কারখানায় কর্মকর্তাকর্মচারীদের টিকা সনদ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার, শপিং মল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সাধারণ লোকসমাগমের স্থানে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার প্রায় ২৯ শতাংশ। এতে ভাইরাসটির তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্যবিদরা করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মানার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে গত ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত রোগী ছয় গুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সঙ্গে সবখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বিধিনিষেধ দিলেও মানুষ সেভাবে মানছে না। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই ফের স্কুল বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা স্কুল খুলেছিলাম। কিন্তু ইদানীং লক্ষ করলাম স্কুলকলেজের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে আসছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক। সংক্রমণ এভাবে বাড়লে ঢাকার শহরের সব হাসপাতালে দেখা যাবে বেড খালি নাই। এ কারণে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উনার সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে করোনার ধরন ডেল্টার সঙ্গে ওমিক্রন হু হু করে বাড়ছে। দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা, শনাক্ত হার আগের দিনের রেকর্ড ভাঙছে। ফলে সব জনগণের আরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা দরকার। অন্ততপক্ষে সবাই যেন মাস্ক ব্যবহার করে সে ব্যাপারে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, নিয়মিত উত্তমরূপে সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোভিড যেভাবে বাড়ছে দ্রুতগতিতে, তার লাগাম টেনে ধরা দরকার এখনই। আতঙ্কিত না হলেও এই পরিস্থিতি আশংকাজনক এবং চিন্তার কারণ। তাঁরা বলেন, যে কোনো ঢেউ বাড়তে বাড়তে তা পিক লেভেলে (সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছানো) যায়। তারপর একসময় কমতে থাকে। কিন্তু দেশে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ থাকলেও সবকিছু স্বাভাবিক চলছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকারও কিছু করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসনকে দোষারোপ করলে চলবে না, জনগণের দায়িত্ব আছে নিজের সুরক্ষার ব্যাপারে। মানুষ বেখায়ালি হলে শত নির্দেশনায়ও কিছু হবে না।

এ ক্ষেত্রে প্রশাসন তার কাজ করবে, সঙ্গে জনগণের নাগরিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। অন্যদিকে প্রশাসনকে শুধু নির্দেশনা দিলেই হবে না। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরকে গ্রাম, পাড়ামহল্লায় কমিটি করে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, ধর্মীয় গুরু, সুশীল সমাজ সবার মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধি মানা এ দুটি পথই রয়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে প্রচারপ্রচারণা বাড়াতে হবে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে