কঙ্কাল উদ্ধার রহস্যের জট খুললো ১৪ মাস পর

হালিশহরে রুবেল হত্যাকাণ্ড, আসামি সোহরাব গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৭ মে, ২০২১ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ১৪ মাস পর পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর তদন্তে উন্মোচিত হলো হালিশহর চৌচালার ওয়াসা প্রকল্পে মানব কঙ্কাল উদ্ধার ঘটনার রহস্য। কঙ্কালটি রুবেল (২৭) নামের এক যুবকের। এ ঘটনার মূল আসামি সোহরাব হোসেন বলীকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। আসামি জানান, পাওনা টাকা না দিতে তিনি রুবেলকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন। ঘটনার বিবরণে পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, গত বছরের ২ মার্চ বেলা সাড়ে বারোটার দিকে হালিশহর থানাধীন চৌচালা এলাকায় ওয়াসা প্রকল্পের সীমানা পিলার খনন করার সময় অজ্ঞাতনামা এক পুরুষের কঙ্কাল দেখতে পান শ্রমিকরা। এরপর তারা হালিশহর থানা পুলিশকে খবর দেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সেটি মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় হালিশহর থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-০৪) দায়ের করেন। পরবর্তীতে জনৈক সামছুল থানায় হাজির হয়ে জানান, মৃত ব্যক্তির লাশটি তার ভাই রুবেলের (২৭) হতে পারে। তার ভাই রুবেল নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর হালিশহর থানায় একটি জিডি করেছিলেন।
পরে আদালতের নির্দেশক্রমে পুলিশ অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির ডিএনএ’র সাথে সামছুলের ডিএনএ আলামত পরীক্ষা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অধিগ্রহণ করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ডিএনএ ল্যাব থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ডিএনএর সাথে তার ভাই দাবিদার সামছুলের ডিএনএর মিল রয়েছে। ফলে কঙ্কালটি রুবেলের (২৭) বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরিদর্শক সন্তোষ কুমার আরো বলেন, পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সোর্সের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আসামি চিহ্নিত করে। একপর্যায়ে গত ৫ মে ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি সোহরাব হোসেন বলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি বলী জবানবন্দিতে জানান, আনুমানিক ৬ বছর আগে তিনি লালমনিরহাট থেকে চট্টগ্রামের এসে হালিশহর মোল্লা পাড়ায় এসে পরিবারসহ ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি হালিশহর থানাধীন চৌচালা এলাকার ওয়াসার জমিগুলি চাষাবাদ করেন। ৩ বছর যাবৎ তিনি হালিশহর চৌধুরী পাড়ার জনৈক মিয়ার জমিতে মাসিক ১১ হাজার টাকা বেতনে কৃষিকাজ করাকালে পার্শ্ববর্তী জমির কৃষক রুবেলের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। রুবেলের বাড়ি দিনাজপুর। রুবেল পার্শ্ববর্তী জমিগুলি বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে নিজে চাষাবাদ করতেন এবং বিভিন্ন মানুষের নিকট সুদে টাকা ধার দিতেন। সুসম্পর্কের সুবাদে আসামি সোহরাব হোসেন বলী প্রতি হাজারে মাসে ১০০ টাকা সুদে রুবেলের থেকে ২,০০০ টাকা নেন এবং পরে আরো কয়েকজনকে সর্বমোট ২৮,০০০ টাকা নিয়ে দেন। ৫/৬ মাস পরে রুবেল ২৮,০০০ টাকা একত্রে চাইলে আসামি সব টাকা দিতে না পারায় তাদের মধ্যে প্রায়শ ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চৌচালা রোডের উত্তর পাশে ওয়াসার জমিতে পাওনা টাকা নিয়ে ভিকটিম রুবেলের সাথে আসামির ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রুবেল কোদাল দিয়ে সোহরাবের হাতে, পায়ে এবং পিঠে কোপ মারেন। তখন আসামিও তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে রুবেলের মাথার সামনের অংশে কোপ মারলে তিনি মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান এবং কিছুক্ষণ পর মারা যান। আসামি তখন রুবেলের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি নিয়ে নেন এবং মৃতদেহটি সেখানে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলেন। একইদিন রাতে আসামি তার বন্ধু জাহেদের কাছে রুবেলের ব্যবহৃত মোবাইলটি বিক্রি করে দেন। ঘটনার ৩ দিন পর আসামি ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে গুদাম থেকে টিসিবির পণ্য জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র জুমাতুল বিদা আজ