ওমিক্রন ধরন মোকাবেলায় প্রণয়ন করতে হবে সময়োপযোগী কৌশল

| বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে এই বলে, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ‘উচ্চ ঝুঁকি’ আছে এবং কিছু অঞ্চলে এটি ‘মারাত্মক পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে। গত সোমবার জাতিসংঘের এই স্বাস্থ্য সংস্থাটি এর ১৯৪ টি সদস্য দেশকে সংক্রমণের ঢেউ ঠেকাতে বিশেষ গ্রুপের মানুষদের মধ্যে টিকাদানের হার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা ঠিক রাখতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার যথার্থতাও নিশ্চিত করতে বলেছে হু। কোভিড-এর এই নতুন রূপকে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক বিমানে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন-সহ অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া শুরু করেছে।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঠেকাতে দেশব্যাপী ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে : সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। সকল ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে। সকল প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে। মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সকল মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই নেই বলেই চলে। আমাদের মত জনবহুল দেশে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হলেও মাস্ক পরিধান কঠিন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও মানুষের মাস্ক ব্যবহারের উদাসীনতা আমাদের সংক্রমণ বৃদ্ধি অন্যতম কারণ। আবার করোনা টিকার ডোজ গ্রহণ করা পর অধিক আত্মবিশ্বাস ও অসচেতনতা আমাদের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশে করোনার নতুন ওমিক্রন ধরন আরও বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। যা হতে পারে আগের থেকে আরও ভয়ংকর। কেড়ে নিতে পারে আরও মানুষের জীবন। কারণ করোনার নতুন প্রজাতির গুলোতে আগের চেয়ে বেশি ভয়ংকর উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বিশ্বের জনস্বাস্থ্যবিদদের এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ভাবিয়ে তুলেছে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। প্রতিদিন বিশ্বের নানা দেশে যেভাবে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা, আগামী দিনের ভয়াবহতার ইঙ্গিত বহন করছে।
সরকারের স্বাস্থ্যখাত যে নিদের্শনা ঘোষণা করেছে, তার বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদেরকে। আমরা যেন ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি লঙ্ঘন না করি, তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারকেও এ দিকে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। প্রণয়ন করতে হবে সময়োপযোগী কৌশল। কারণ সময়োপযোগী সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা করে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক সহজ। আমরা দেখছি ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড ও অষ্ট্রেলিয়ার মত দেশ সঠিকভাবে পরিকল্পনার করে করোনা মোকাবিলায় সফলতা পেয়েছে। বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হলে নতুন সংক্রমণকে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারি যেকোন সিদ্ধান্তকে সঠিকভাবে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করা জন্য সবার আগে প্রয়োজন জনগণের সম্পৃক্ততা। তাই বাস্তবতাকে বিবেচনায় এনে ছোট ছোট বিষয় সমূহে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। মাস্ক পরিধান, যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি অনুসরণে জনসাধারণকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা গেলে ফলাফল ভালো হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে