ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : আইনমন্ত্রী

| রবিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিয়ে সমালোচিত বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এজন্য আজ রোববার প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখবেন বলে গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষে বৃহস্পতিবার সব আসামির খালাসের রায় দেন ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এই বিচারক। তার সঙ্গে ধর্ষণের ফরেনসিক পরীক্ষায় ৭২ ঘণ্টার বাধ্যবাধকতার যুক্তি দিয়ে সে কারণে ওই সময়ের মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একটি কথা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি উনার (বিচারক) রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। কিন্তু উনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেজন্য আগামীকাল (আজ) প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি লিখছি।
ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় গিয়ে একটি মামলা করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, এক মাসের বেশি সময় আগে ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে তাকে এবং আরেক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ওই তরুণীর মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ। এছাড়া সাফাতের দুই বন্ধু এবং দেহরক্ষী ও গাড়িচালককেও আসামি করা হয়। তবে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল শুধু সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে। বাকিদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল সহযোগিতার অভিযোগ।
চার বছর পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রায় দেন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। তাতে তিনি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে সব আসামিকে খালাস দেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারী তরুণী স্বেচ্ছায়ই রেইনট্রি হোটেলে গিয়ে আসামির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলেই প্রমাণিত হয়েছে। রায়ের সময় পুলিশকে ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দেন বিচারক। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
এই বিচারকের রায়ের পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনাই শুধু নয়, সংবিধানের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন অধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা। রায় হচ্ছে কোনো একটি মামলায় দণ্ড বা সাজার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত। আর রায়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ওই মামলা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অভিমত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ; যা বিচারক প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারেন। নিম্ন আদালতের রায়ের মতোই পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালত বাতিল করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোরে ঘুম থেকে ডেকে দেওয়ায় পুত্রের লাঠির আঘাতে পিতা খুন!
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড় দখলে এবার টিনের ঘেরা