প্রশ্ন: জরুরি বিভাগে কোন ধরনের অসুস্থতা বা শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: জরুরি বিভাগে সাধারণত মেডিকেল বা সার্জিক্যাল সব ধরনের রোগীরাই আসে। তবে হার্ট এবং পেটে ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকে। যদিও বিগত কয়েকমাস ধরে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই ছিল করোনাক্রান্ত রোগী, এবং আমরাও তাদের যথাযথ সেবা প্রদানের চেষ্টা করেছি। তবে সরকার কর্তৃক ভ্যাকসিন সুবিধা চালুর পর থেকে ধীরে ধীরে এই সংখ্যা অনেকাংশেই কমে এসেছে এবং এখন তা প্রায় নেই বললেই চলে।
প্রশ্ন: রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের জরুরী চিকিৎসা সেবা বিষয়ে কী ধরনের জ্ঞান থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। আমরা অনেকেই রোগবালাইকে অবহেলা করে থাকি এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করি। আবার দেখা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ বাদ দিয়ে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবরা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ঔষধ খেতে উপদেশ দিয়ে থাকে, যা সত্যিই দুঃখজনক। কাছের কেউ অসুস্থবোধ করলে সকলের উচিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনবোধে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি রোগীকে হাসপাতাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের চেষ্টা করা, জরুরী প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের যোগাযোগ নাম্বার সাথে রাখা। আমাদের একটু অসচেতনতা এবং অসতর্কতাই আমাদের প্রিয়জনদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এসকল বিষয়ে সকলের সচেতন থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা সব রোগীই কি গুরুতর রোগী? নাকি প্রাথমিক পর্যবেক্ষনের পর নির্ধারণ করা হয় তিনি গুরুতর রোগী কি না?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: বর্তমানে দেখা যায় যে রোগীরা হালকা অসুস্থবোধ করলেই হাসপাতালে আসছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ রোগবালাইকে অবহেলা করার মানুষের চিন্তাভাবনা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলবো যে অবশ্যই অধিকাংশ রোগীই গুরুতর অবস্থায় থাকে না। আমাদের কাছে আসার পর যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা রোগীর অবস্থা নির্ণয় করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: অনেকের মধ্যেই এই ধারণা কাজ করে যে ‘ইমার্জেন্সিতে সবচেয়ে দ্রত সেবা পাওয়া যায়’- এ ধারনাটির বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: বাংলাদেশের ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট বা জরুরি বিভাগগুলো অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেকাংশেই পিছিয়ে। যার কারণে এর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাও সীমিত। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে ‘ইমার্জেন্সি’ হাসপাতালেরই একটি বিভাগ এবং প্রতিটি বিভাগেরই নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি থাকে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করে। এখানে যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগীর জন্য কি করণীয় তা নির্ধারণ করা হয়। এটা সত্য যে জরুরি বিভাগে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে রোগ বা রোগের অবস্থা নির্ধারণে সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য যে, এভারকেয়ার চট্টগ্রামে সম্প্রতি ‘ওয়ান স্টপ’ জরুরী সেবা সুবিধা চালু হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধরে বিপদ মোকাবেলা করা শ্রেয়’- জরুরী স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে কথাটি আপনার দৃষ্টিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: অবশ্যই যখন আপনার কাছের কেও অসুস্থ থাকবে, আপনি বিচলিত হয়ে পড়বেন এবং তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করবেন। তবে কখনও কখনও রোগ নির্ণয়, চিকিৎসার প্রাক-পরবর্তী সময়কাল ইত্যাদি কাজে সময় ব্যয় হয়। সেক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের অবশ্যই ধৈর্য এবং আস্থা রাখতে হবে। তাহলে আমাদের কাজ যেমন সহজ হবে, তেমনি রোগীর যথাযথ চিকিৎসা প্রদানেও আমরা সক্ষম হবো।
প্রশ্ন: জরুরি বিভাগ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীদের আপনারা কী পরামর্শ দিয়ে থাকেন?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: যেসকল রোগীদের আমাদের ‘হোম-কেয়ার’-এর পরামর্শ দেই তারা হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার পরও তাদের সাথে আমাদের হেলথ কেয়ার বিভাগ, হেলথ কমিউনিকেশন বিভাগ এবং কাস্টমার কেয়ার বিভাগের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। তাই বলা যায় যে রোগীরা বাড়িতে গিয়েও হাসপাতালের তত্বাবধায়নে থাকেন এবং ফোন অথবা ভিডিও কলের মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসকবৃন্দ প্রয়োজনীয় তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া জরুরী প্রয়োজনে তাদের ঠিকানায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: এভারকেয়ার চট্টগ্রামের জরুরি বিভাগ অন্যান্য হাসপাতাল থেকে কোন বিষয়ে আলাদা ও কেন?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম’ই দেশের একমাত্র হাসপাতাল যাদের কম্প্রিহেন্সিভ ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট বা পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ আছে। এখানে বিভাগের নিজস্ব চিকিৎসক নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষণিক সেবাদানে নিয়োজিত থাকে। এছাড়া চট্টগ্রামে সম্প্রতি ‘ওয়ান স্টপ’ জরুরী সেবা চালু হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য এই ধারণাটি সম্পূর্ণ নতুন। এখানে মেডিকেল, সার্জিক্যাল, কার্ডিয়াক ও পেডিয়াট্রিক সহ সকল রোগের সেবা পাওয়া যাবে। এই সুবিধাগুলোর কারণেই এভারকেয়ার চট্টগ্রাম অন্যান্য হাসপাতাল থেকে আলাদা এবং বাড়তি সুবিধাসম্পন্ন।
প্রশ্ন: এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের মানসম্পন্ন স্বাস্থসেবা, দেশের চিকিৎসা খাত সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
ডা. ঋভু রাজ চক্রবর্তী: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই করোনা মহামারীতে দেশের স্বাস্থ্যখাত লক্ষ্যণীয় প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং দেশের সকল চিকিৎসক, নার্স সহ সংশ্লিষ্ট সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হয়েছে বলে আমি মনে করি। এবং এই প্রশংসার এক বলিষ্ঠ ভাগীদার এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম। কারণ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন এই হাসপাতালে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে এবং লক্ষ্যণীয় সফলতাও আমরা অর্জন করেছি। বিদেশমুখী না হয়ে যাতে করে দেশের মাটিতেই সকলে বিশ্বমানের চিকিৎসা লাভ করে, আমরা সেই নিশ্চয়তাই দিচ্ছি। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে এভারকেয়ার চট্টগ্রাম দেশ্র স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে দারুণ ভূমিকা রেখেছে।
লেখক: কনসালটেন্ট-জেনারেল সার্জারি অ্যান্ড ট্রমাটোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম