এখন অস্তিত্বের সঙ্কট

অভিজিৎ বড়ুয়া অভি | শুক্রবার , ২২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মুসলিম বলছে আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অন্য ধর্মকে আঘাত করা আমার ধর্মে নেই। হিন্দু বলছে, অন্য ধর্মকে ধ্বংস করা আমার ধর্ম নয়। বৌদ্ধ বলছে আমার ধর্ম শান্তির ধর্ম। খ্রীষ্টান বলছে সহ্য আর ত্যাগ আমার ধর্ম। তাহলে ধর্মের নামে একে অপরকে হত্যা করছে, নারীকে অত্যাচার করছে, অন্যের ধন সম্পদ লুট করছে তারা কারা, কোন ধর্মের? পীরগঞ্জের হরিদাশের স্ত্রী-সন্তানের মুখ চেপে ধরে সারারাত ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিলেন, রামুতে বৌদ্ধরা লুকিয়ে ছিলো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমার সংখ্যালঘু নাগরিক তকমা, বাংলাদেশী নই। আমরা বাংলাদেশী কখন হবো? রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরকে দায়ী করছে। কিন্ত তাদের এই অপরাজনীতির ফল ভোগ করছে সংখ্যালঘুরা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনা নিয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম, সে বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে পুড়েছে? আজ পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিয়ে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত। প্রগতিশীলের কথিত অসামপ্রদায়িকতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা কোথায় এখন? ১৯৪৭ সালের পর এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ ছিলো, এখন তা কমে বর্তমান ৯ শতাংশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, গত পঞ্চাশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটি হয়েছে। কিন্তু হিন্দু সমপ্রদায়ের সংখ্যা কেন ২৯% থেকে কমে ৯% এ নেমে আসলো? বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং ৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামপ্রদায়িক শক্তির সাথে আপস এর জন্য দায়ী? সংখ্যালঘুদের জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা কি আদৌ নিশ্চিত হবে? এখন সংখ্যালঘুদের প্রশ্ন, আমি কি আগে বাংলাদেশী না আগে সংখ্যালঘু? বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সংখ্যালঘুদের কি নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে?
এ যাবত সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কোন বিচার হয় নি। এর জন্য শুধুই রাজনৈতিক দল দায়ী নয়, সংখ্যালঘুদের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের দায় রয়েছে। প্রতিটি সরকারের সময় হঠাৎই কিছু ব্যক্তি তৎপর হয়ে ওঠে, যারা এই সব সংগঠনকে ব্যবহার করে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারকে পুঁজি করে সরকারের আপন হয়, রাজনীতি করে ও ফায়দা লোটে। আর সংখ্যালঘুদের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠনগুলো সব সরকারের সাথেই আপস করে চলে। আর প্রগতিশীলদের কথা নাই বা বললাম। সংখ্যালঘুদের অসহায়ত্ব খুবই চরমে। তাদের কাছে রাজনৈতিক বাদানুবাদের কোনো গুরুত্ব নেই। বলা যায় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বের সঙ্কট এখন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসকল সামপ্রদায়িক অপশক্তির অবসান চাই
পরবর্তী নিবন্ধমাটির পুতুল