এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি স্বপ্নের মহামায়া প্রকল্প

বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি ও অব্যবস্থাপনা

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক ঘিরে নেওয়া স্বপ্নের প্রকল্পটি এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। এটিকে দৃষ্টিনন্দন ও দর্শনীয় স্থান করার লক্ষে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখানে উন্নয়নের চেয়ে বেড়েছে অব্যবস্থাপনা আর ভোগান্তি। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়নি। তাই হতাশ দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরাও। তবে সম্প্রতি মহামায়ার উন্নয়নে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বৃদ্ধি লক্ষে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহামায়া সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। প্রধানত সেচ প্রকল্প হলেও প্রধানমন্ত্রী সেদিন ঠাকুরদীঘি এলাকায় সমাবেশে বক্তব্যে এই লেকে পর্যটন সম্ভাবনার বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সাবেক গৃহায়ণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি নৌকাযোগে ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দৃষ্টিনন্দন এই মহামায়া লেক পরিদর্শন করেন। এসময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মহামায়াকে একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান করার লক্ষে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেন। এখানে অভয়ারণ্যের পাশাপাশি ফিশ মিউজিয়াম, ক্যাবল কার, কটেজ, একাধিক পিকনিক স্পট, শব্দ দূষণমুক্ত নৌকা, স্পিড বোট, টয়লেট, নিরাপত্তা ব্যারাক, বিশ্রামাগারসহ নানা উদ্যোগের প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু এক যুগেও আলোর মুখ দেখেনি সেই প্রকল্প। তবে সম্প্রতি নামে মাত্র কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষক খুরশিদ আলম বলন, মহামায়া লেকে ভ্রমণে এসে বেশ হতাশ হয়েছি। গতবার এসে এখানে নৌকায় চড়ে ঝরনা দেখেছি জনপ্রতি মাত্র ২০টাকা দিয়ে। আর এখন নাকি দুই হাজার টাকায় নৌকা রিজার্ভ বাধ্যতামূলক। ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে ৫০ টাকা হোক। কিন্তু বাধ্যতামূলক রিজার্ভ সিস্টেম দর্শনার্থীদের খুবই হতাশ করছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী রাশেদা আক্তার বলেন, এখানে নেই স্বাস্থ্যসম্মত ভালো মানের একটি খাবারের দোকানও। ১২ বছরেও নির্মাণ হয়নি একটি পাবলিক টয়লেট। লেকের জলে কেউ গোসল করতে চাইলে সেই ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি। জানা যায়, সম্প্রতি তথ্যসেবা কেন্দ্র, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য ব্যারাক, টয়লেট ও গোলছাতা ঘর নির্মাণ, বনায়ণ, ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ অনুমোদিত হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের করের হাট ও নারায়ণহাট রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহম্মদ খান বলেন, নতুন করে বনায়নের ফলে মহামায়ায় বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন আবারো শুরু হবে। ফলে পর্যটনের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি। তিনি জানান, মহামায়ার উন্নয়নে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে সম্প্রতি।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, মহামায়া এলাকায় কিছু অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করছি এই লেক এলাকাকে নান্দনিকভাবে গড়ে তুলতে সরকার আগামীতে উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোর রাতে ভূমিকম্প
পরবর্তী নিবন্ধবাতিল হওয়া দুই ফ্লাইট চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে