এক মুহূর্তের জন্যও অসচেতন হলে চলবে না

| শনিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালীন সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো একটু মেনে চলার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে গেলেও মাস্ক পরা বা হাত ধোয়ার মতো সুরক্ষাবিধিগুলো না মানলে তাদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জোর দিয়ে আসছেন। দেশের মানুষ ও প্রবাসে যারা আছেন প্রত্যেকেরই তিনি মঙ্গল কামনা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে অনেকেই ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। এরপরও মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিগুলো মেনে চলতে হবে। এর কারণ, টিকা শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, এমন অনেকেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। আবার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলেও তাঁদের মধ্যে উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু তাঁরা ঠিকই অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন। মাস্ক না পরলে এবং সামাজিক দূরত্ব না মানলে সেই ঝুঁকি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে আশপাশের টিকা না পাওয়া ব্যক্তিরা চরম বিপদে পড়তে পারেন। যখন দেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষের টিকাদান সম্পন্ন হবে, তখন স্বাস্থ্যবিধি শিথিলের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু বিশ্বে প্রায় শতভাগ টিকা দেওয়া দেশেও সংক্রমণ বাড়ছে। তাই এ নিয়ে আবার ভাবতে হবে।
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. আজিজুর রহমান তাঁর এক লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি)’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চললে তা হবে করোনা পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম সুরক্ষা। টিকার চেয়ে সুরক্ষা বেশি দেয় মাস্ক। মাস্কই করোনার বিরুদ্ধে সেরা রক্ষাকবচ। তার মানে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। টিকার সুফল ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে টিকাগুলো কার্যকর হলেও যত দিন পর্যন্ত মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসছে, তত দিন মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। একজনের মাধ্যমে অন্যজনের শরীরে যাতে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে, সে জন্য সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য টিকার দুটি ডোজই নেওয়া উচিত। টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই নয়; বরং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে শরীরে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়। করোনার ধরন পাল্টাচ্ছে। নতুন ধরনগুলোর বিপরীতে টিকা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু করোনার যে ধরনই আসুক না কেন, মাস্ক সব ধরনের সংক্রমণের জন্য কার্যকর। তাই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সব সময় মাস্ক পরে চলতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবিএম খুরশীদ আলমও বলেছেন, করোনার সংক্রমণ আর যেন না বাড়ে, সে জন্য ছোট-বড় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা এখন দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছি। এটি সামাল দিতে সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। আমরা মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করার পরামর্শ দিয়েছি।
যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এলো করোনাভাইরাস। বাংলাদেশ শুধু নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতি আজ স্থবির। তারপরও আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। আমাদের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে পিছিয়ে না পড়ে, এ জন্য সরকার প্যাকেজ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সারের দাম কমানো হয়েছে। করোনাভাইরাসে অন্য দেশে হাহাকার হলেও তুলনামূলক আমাদের দেশে তা কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এখনো মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে সব কিছুই খুলে দেয়া হলেও আমাদের এক মুহূর্তের জন্য অসচেতন হলে চলবে না। করোনা থেকে রক্ষা পেতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে