এক মাস আগেই আয়াতকে হত্যার পরিকল্পনা করে আবির

গ্রেপ্তার বন্ধু হাসিবের জবানবন্দি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

অপহরণের এক মাস আগেই পাঁচ বছরের শিশু আয়াতকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল আবির। আবিরের বন্ধু হাসিব (১৭) গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলে। গত ৬ ডিসেম্বর বন্দরটিলা নয়ারহাট তার বাসার সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় হাসিব। আদালতে সে ক্ষমা চেয়ে বলে, খুনের ঘটনা জানার পরও প্রকাশ না করায় আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি যদি সেই সময় আয়াত হত্যার বিষয়টি জানিয়ে দিতাম, তবে তাকে ছয় টুকরো হতে হতো না।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে জানার পরও তা গোপন রাখার অভিযোগে হাসিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হাসিব আয়াতের বাসার কাছে নয়ারহাট এলাকায় ভাই ভাই হোটেলের কর্মচারী। আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছ মুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে।

পরিদর্শক ইলিয়াস বলেন, আয়াত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আবির আলী ও হাসিবের মধ্যে ভালো সখ্য ছিল। অপহরণের আরও এক মাস আগে আবির বিষয়টি হাসিবের সঙ্গে আলোচনা করে। হাসিব আদালতে জানিয়েছে, এক মাস আগে আবির তাকে বলেছিল যে, আয়াতকে অপহরণ করে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করবে। এ কাজে তার সাথে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিল আবির। কিন্তু হাসিব সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

হাসিব জানায়, যেদিন আয়াতকে খুন করে আকমল আলী রোড পকেট গেইটে আবির তার মায়ের বাসায় লাশ নিয়ে গিয়েছিল সেটিও সে জানত। কিন্তু বিষয়টি গোপন করে গেছে। জবানবন্দিতে হাসিব আরও জানিয়েছে, পরিকল্পনাটি কাউকে বলতে নিষেধ করেছিলেন আবির। আয়াতকে খুন করে আবির তার হোটেলে গিয়ে ভাত খায়।

বিকাল ৫টার দিকে আয়াতকে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে সন্ধ্যার দিকে সে আবিরকে দেখে এবং তার সঙ্গে লেবার কলোনিতে আয়াতকে খুঁজতে যায়। এসময় আবিরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে (আবির) আয়াতকে খুন করে লাশ আকমল আলী পকেট গেইটে তার মায়ের বাসায় নিয়ে রেখেছে বলে জানায়। কিন্তু ভয়ে বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করেনি।

গত ১৫ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনির সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী ১৯ বছর বয়সী আবির আলীকে আটক করে।

আবির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলে, ‘মুক্তিপণের’ জন্য শিশু আয়াতকে অপহরণ করে আবির। কিন্তু কোথাও রাখার জায়গা না পেয়ে তাকে হত্যা করে। তারপর আয়াতের বাবার কাছে টাকা দাবি করার পরিকল্পনা করে সে। সেজন্য একটি মোবাইলও কেনে। আর আগে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিম তার সংগ্রহে ছিল। কিন্তু সেটা সচল না থাকায় ফোন করতে পারেনি।

আয়াতের মৃতদেহ ছয় টুকরো করে ছয়টি প্যাকেটে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিয়েছিল সে। এর মধ্যে মাথা ও দুই পা আকমল আলী রোড স্লুইচ গেইটের কাছে নর্দমায় এবং দুই হাত ও বাকি অংশ সাগরে ফেলার কথা বলেছিল সে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করেছে পিবিআই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নতুন ডিসি ফখরুজ্জামানের দায়িত্ব গ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধনতুন মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন কায়কাউস বিশ্ব ব্যাংকে