এক বৈদ্যের অন্ধকার জগৎ

টার্গেট অসহায় নারী ও প্রবাসীর স্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

টার্গেট অসহায় নারী ও প্রবাসীর স্ত্রী। তাদের কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নেন বড় অংকের টাকা। গড়নে ছোটখাটো হলেও বয়স ৬২ বছর। সবসময় পরেন পাঞ্জাবি। বেশভূষায় সভ্য হলেও বৈদ্যগিরির আড়ালে তার মূল কাজ ধর্ষণের পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার তদন্তে নেমে এই বৈদ্যের অন্ধকার জগতের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব।

প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে তিন মাস যোগাযোগ ছিল না এক সন্তানের জননী ওই নারীর। হন্যে হয়ে খুঁজে শেষে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবেশীর পরামর্শে স্বামীর খোঁজ পেতে দ্বারস্থ হন ‘পানি বাবা’ নামে এই বৈদ্যের। স্বামীর সন্ধান দিতে ওই নারীকে প্রথমে তিন দফা পানি পড়া খাওয়ান বৈদ্য। বিনিময়ে প্রতিবার তাকে গুণতে হয় ৫ হাজার টাকা। কিন্তু পানি পড়ায় কাজ হয়নি, মিলেনি স্বামীর খোঁজ। আবারও বৈদ্যের কাছে যান প্রবাসীর স্ত্রী। বৈদ্য এবার দেন অনৈতিক প্রস্তাব। পানি বাবা জানায়, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলেই কেবল নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ পাবে ঐ নারী। এই কথা শুনে ভয়ে কাতর নারী প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু বৈদ্য এবার অন্য কৌশল নেন, আবারও পানি পড়া খেতে দেন নারীকে। পানিতে মিশিয়ে দেন ঘুমের ওষুধ। শেষমেশ স্বামীর খোঁজে গিয়ে এই বৈদ্যের কাছেই সর্বস্ব হারাতে হয় তাকে।

এ ঘটনায় র‌্যাব৭ চট্টগ্রামের কাছে অভিযোগ গেলে অভিযানে নামে র‌্যাব। গত সোমবার রাত ৯টায় হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলী প্রকাশ পানি বাবাকে (৬২) আটক করে র‌্যাব। আটক মোহাম্মদ আলী বাথুয়া এলাকার মৃত সুলতান আহমদের ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে কবিরাজির বিভিন্ন জিনিসপত্রও উদ্ধার করা হয়।

আটকের বিষয়ে র‌্যাব জানায়, ভুক্তভোগীর সাথে ওই প্রবাসীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একটি সন্তান আছে। তার স্বামী গত ছয় বছর ধরে মালেশিয়ায় থাকেন। এদিকে এক বছর আগে সন্তানের পড়ালেখার সুবিধার্থে স্ত্রীকে তার স্বামী চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে বলেন। স্বামীর কথামতো ওই গৃহবধূ নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। তবে ওই বাসায় ওঠার পর থেকে গত তিন মাস ধরে আচমকা তার স্বামী যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য এক প্রতিবেশীর পরামর্শে দ্বারস্থ হন বৈদ্য মোহাম্মদ আলীর।

২২ জানুয়ারি শেষবারের মত পানি পড়া খেতে নিজের আখড়া হাটহাজারীতে ওই নারীকে যেতে বলেন পানি বাবা মোহাম্মদ আলী। সেখানে কৌশলে তাকে পানির ভেতর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেয় বৈদ্য মোহাম্মদ আলী। সেই পানি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ওই নারী। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে এলে বুঝতে পারেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর কান্নাকাটি করলে ওই নারীকে একটি রিকশায় তুলে দিয়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন কবিরাজ। ঘটনার দুদিন পর সোমবার র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ভণ্ড বৈদ্যকে আটক করে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আটক মোহাম্মদ আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে সে একজন ভুয়া কবিরাজ। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্নভাবে তাবিজ, পানি পড়া দেয় সে। এরপর বিভিন্ন কৌশলে অসহায় নারীদের নিয়ে এসে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করে। তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। আটক আলীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে তাকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিতার মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল
পরবর্তী নিবন্ধ২২ ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দের সাথে রিভিউ কমিটির মতবিনিময় আজ