এক প্রশ্নপত্রে অনেক বিতর্ক

সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে : বাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর অন্যতম খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাওয়া স্কুলের সদ্য সম্পন্ন একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নবম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা (সৃজনশীল) বিষয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নটি করা হয়। এই প্রশ্ন নিয়ে এর মধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এতে মাইজভান্ডার দরবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ করে এই প্রশ্ন যিনি তৈরি করেছেন তাকে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়েছে। অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বাওয়া স্কুলে বর্তমানে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এরমধ্যে নবম শ্রেণির দুই শিফটে রয়েছে চার শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটিতে তিনজন ধর্মীয় শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে আবদুর রহিম নামের একজন শিক্ষক গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নবম শ্রেণির প্রশ্নটি তৈরি করেন বলে বাওয়া স্কুল সূত্র জানিয়েছে।

ওই প্রশ্নপত্রের ১ নম্বর প্রশ্নে লেখা হয়েছে : ‘সানজিদা তামান্না নিঃসন্তান দম্পতি। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরীফে যেয়ে বাবার কাছে সন্তান লাভের জন্য কান্নাকাটি করবেন। একদিন তারা বাবার দরবারে গেলেন সেখানে তারা সিজদায় রত অবস্থায় বাবাকে স্মরণ করে দুআ করলেন। দরবারে অবস্থানরত জনৈক এক ব্যক্তি তাদের এ কর্মকান্ড দেখে বললেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে চরম জুলুম করেছ যা ক্ষমার অযোগ্য।

. নিফাক কি?

. খতমে নবুয়ত বলতে কী বোঝায়, ব্যাখ্যা কর।

. উদ্দীপকের দম্পতির কাজগুলো কি বৈধ হয়েছে? কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

. জনৈক ব্যক্তির অভিমত ব্যক্ত কর।’

প্রশ্নটি চার শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হয়। পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গতকাল এই প্রশ্নটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। বাওয়া স্কুলের এই প্রশ্নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মাইজভান্ডার শরীফকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করে তার শাস্তি দাবি করা হয়। অনেকেই ওই শিক্ষকের গ্রেপ্তারও দাবি করেন।

এ প্রশ্নের ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা খুবই অন্যায় হয়েছে। ধর্ম পুরোপুরি একটি বিশ্বাসের ব্যাপার। আস্থার ব্যাপার। বিশ্বাস থেকে কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ বা কেউ খ্রিস্টান। মাইজভান্ডার দরবার শরীফ সুফীবাদে বিশ্বাসী মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা। অলিআউলিয়াদের স্থান। এটা কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ করেন না। কিন্তু মাইজভান্ডার শরীফের কেউ তাদের বিশ্বাস করতে কাউকে বাধ্য করেন না, চাপিয়ে দেন না। যাদের ভালো লাগে তারা সেখানে যান, মানত করেন, দোয়া করেন। এই ধরনের ধর্মীয় অনুভূতির কোনো বিষয়, ধর্মকে আঘাত করে এমন বিষয়, সুফীবাদকে ব্যঙ্গ করা কোনো বিষয় আমাদের শিক্ষা জগতে আসা উচিত নয়।’ ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টিকে দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে গতরাতে বাওয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আরিফ উল হাসান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নজরে আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি অন্যায় হয়েছে। আমাদের শিক্ষক অন্যায় করেছেন। এই ধরনের বিকর্তিক প্রশ্ন করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।’ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘যেসব বিষয় বিতর্ক সৃষ্টি করবে তা আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত। তাছাড়া ধর্মীয় বিধিবিধান বা জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আলাদা আলেম ওলামা রয়েছেন। তাঁরা এসব নিয়ে ভাববেন, বলবেন।’ আবদুর রহিম নামের ওই শিক্ষক বয়সে নবীন হওয়ায় বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারেন নি বলেও অধ্যক্ষ উল্লেখ করেন।

ধর্মীয় কিংবা সুফীবাদের অনুভুতিতে আঘাত ছাড়াও প্রশ্নটিতে তিনটি অসঙ্গতি রয়েছে। সানজিদা তামান্না এককভাবে দম্পতি হতে পারেন না। আবার পরের লাইনে বলা হয় ‘তারা সিদ্ধান্ত নিলেন’। জনৈক মানেই একজন। সেখানে লেখা হয়েছে ‘জনৈক এক ব্যক্তি’। ‘কর্মকাণ্ড’ বানান লেখা হয়েছে ‘কর্মকান্ড’। এই ধরনের শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা ঠিক কতটুকু শিখবেন তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষক আবদুর রহিমের সাথে গতরাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাউকে আঘাত দিতে বা কাউকে ইন্ডিকেট করে প্রশ্নটি করা হয়নি। একটি উদ্দীপক হিসেবে প্রশ্নটি করা হয়েছে। সেখানে যে কারো বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া যায় বলেও তিনি দাবি করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমপি পদে প্রার্থী হতে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান গালিবের পদত্যাগ
পরবর্তী নিবন্ধকর্মসূচিতে অনুপস্থিত খাগড়াছড়িতে বিএনপির দুই নেতার পদ স্থগিত