ব্যাংকে এক পরিবারের তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবেন না– এমন বিধানের পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার বিধান রেখে আবারও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হচ্ছে। গতকাল এ আইন সংশোধনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। বৈঠকের পর সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ। এটা আগে ছিল চার, এটাকে তিন করা হয়েছে। কোনো একটা পরিবারের সর্বোচ্চ তিনজন একটা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য হিসাবে থাকতে পারবেন। নতুন আইনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এর সংজ্ঞা নির্ধারণের কথাও সাংবাদিকদের প্রশ্নে তুলে ধরেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
পাঁচ বছর আগে সংসদের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনার মধ্যেই ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে এক পরিবারের চার সদস্য থাকার সুযোগ দেওয়া হয়; এর আগে যা ছিল দুজন। এরপর ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সমালোচনা এবং সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে আইনটি আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২১ সালের ১৭ মে এজন্য সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এবার পরিচালক সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিধান যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।
ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংস্কারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শও ছিল। গতকাল এ আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা এখন অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠানো হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১–এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে সচিব মাহমুদুল বলেন, এটাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারা রয়েছে। তিনি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়ার বিষয়বস্তু তুলে ধরে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান।
এমন খেলাপিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে, বলে খসড়ায় নতুন বিধান রাখার কথা জানান তিনি।
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে, এমন বিধান রাখার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত তালিকা অব্যাহতি প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়, যা পাঁচ বছরের বেশি হবে না, অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার তালিকায় আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।