একাধিক স্থানে শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন

চকরিয়া প্রতিনিধি

চকরিয়ার হারবাং ছড়া ।। হুমকিতে তিন পাড়ার ৫ শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি | বৃহস্পতিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের তিন পাড়া ধরপাড়া, নাথপাড়া ও মুসলিমপাড়ার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে হারবাং ছড়া। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এই ছড়ার মিঠা পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করেন এখানকার কৃষক। বর্ষাকালে এই ছড়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভোগায় হারবাং ও আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে। ওই সময় ছড়ার দুই তীরে ভাঙন শুরু হয়। গত তিন মাস ধরে ছড়াটির একাধিক স্থানে শক্তিশালী শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তিন পাড়ার পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, দুটি মন্দির, কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমি। কারণ উত্তোলন করা বালু রাখা হচ্ছে ফসলি জমি, ছড়ার দুই তীর এবং আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন খোলা জায়গায়। তিন পাড়ার ভুক্তভোগী অনেকে আজাদীকে বলেন, একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলনের জন্য তিন পাড়ার মাঝখানে ছড়ায় শ্যালো মেশিন বসানোর সময় পাড়ার অনেকেই বাধা দেয়। এ সময় বাধা দেয়া কয়েকজনকে মারধর করা হয়। সরেজমিনে জানা গেছে, ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মানিক লাল ধরের সাড়ে তিন কানি জমি রয়েছে। সেখানে আছে মানিক লালের ওয়ারিশদের বসতবাড়ি। বাকি জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর পাশেই রয়েছে ছড়ার তীর সংলগ্ন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশবাগান ও শতবর্ষী তালগাছ। বর্তমানে অবৈধ বালু তোলার কারণে সেই জমি এখন বিলীন হয়ে বসতবাড়ির কাছে চলে গেছে। এতে পরিবারগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মানিক লাল ধরের পুত্র অশোক ধর ও কেশব কুমার ধর বলেন, পৈত্রিক বাড়িভিটে, ফসলি জমি, গাছ ও বাঁশের বাগানসহ আশপাশের বসতবাড়ি রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজজামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ বালু তোলায় ব্যবহৃত মালামাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

তারা বলেন, প্রশাসনের অভিযানের পর সিন্ডিকেট আরো পাঁচটি শ্যালো মেশিন ও শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে ছড়ার পাশাপাশি আমাদের পৈত্রিক জমি দখলে রেখে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সেই বালু স্তূপ করে রাখা হচ্ছে আমাদেরসহ আশপাশের মানুষের খতিয়ানভুক্ত জায়গা, ছড়ার দুই তীরসহ খোলা জায়গায়।

ভুক্তভোগী তিন পাড়ার মানুষ অভিযোগ করেছেন, ছড়া ও খতিয়ানভুক্ত জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত রয়েছেন আওয়ামী লীগ নামধারী মোহাম্মদ শওকত। তার সঙ্গে রয়েছেন অনেক মামলার আসামি নাছির উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, শেখ বেলালসহ ১৫ জনের সিন্ডিকেট। তারা সশস্ত্র পাহারাও বসিয়েছেন। কেউ ওদিকে গেলে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। ইতোমধ্যে ছড়ার দুই তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে বলে জানান তারা।

হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ আজাদীকে বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে শওকত নামের একজনের নেতৃত্বে বালুদস্যু সিন্ডিকেট এই অপকর্ম করছে। তবে শওকত আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

মোহাম্মদ শওকত আজাদীকে জানান, বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইজারাকৃত অংশ থেকেই তিনি বালু উত্তোলন করছেন। এখানে কারো জায়গা থেকে তিনি বালু উত্তোলন করছেন না।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান আজাদীকে বলেন, হারবাং ছড়া এবং মানুষের জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন কাউকে অনুমতি বা ইজারা দেয়নি। যদি কেউ অনুমতির কথা বলে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, হারবাংয়ের কয়েকজন ব্যক্তি লিখিতভাবে অভিযোগ করার পর সেখানে এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল। তখন অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ মালামাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও যদি সেখানে কর্মকাণ্ড চলতে থাকে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকাগামী সাড়ে ৭ শতাধিক রোহিঙ্গা আটক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেমের সম্পর্ক করায় কিশোরী সেতুকে কুপিয়ে হত্যা