একটি গোষ্ঠী সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রামে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি বলেছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কোনো ধর্ম নেই, জাত নেই। তারা মানুষ নয়। সম্প্রতি দেশ জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো একটি গোষ্ঠী সুকৌশলে আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে ঘটিয়েছে, ঘটাচ্ছে। এরা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি।
প্রতিমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, একাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দয়া পরবশ হয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যতীত বাকিদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তারাই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। একযোগে সারা দেশে বোমা হামলা চালিয়েছে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে, ২০১৩-১৪ সালে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে; আবার এরাই জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন সময় উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা চায় আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার যেন বিজয়ী হতে না পারে, দেশের উন্নয়নের রথ যেন থেমে যায়। দল মত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ঘটনার উৎপত্তি হয়। বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। বাহাত্তরের সংবিধানে এ দেশ পরিচালিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা এ দেশের অসাম্প্রদায়িকতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি
কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একজন বিধর্মীর সুখে দুখে আপদে বিপদে পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা নবীজী আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিছু মানুষ যখন ধর্মের নামে মানুষের উপকার না করে অপকার করে, তখন তারা আর মানুষ থাকে না। আমাদের বুঝতে হবে, অসাম্প্রদায়িক এ দেশের শান্তি কারা বার বার কেড়ে নিতে চায়। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হানার অপচেষ্টা তারা ইতোপূর্বেও চালিয়েছে, এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা ঘটতে পারে এ চিন্তা আমাদের ছিল না। সরকার হিসাব করেছিল, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দৌঁড়ঝাপ চলছিল। এজন্য প্রশাসনের মধ্যেও কিছুটা শিথিলতা ছিল। এর সুযোগ নিয়েছে সেই অপশক্তি। তিনি বলেন, কোরআন শরীফ ছিল মূর্তির কোলের উপর। বলা হলো আছে পায়ের নিচে। যে রেখেছে, তার পাশাপাশি যারা এ মিথ্যে প্রচার করেছে তারাও অপরাধী। যে এ কাজটা করেছে, সে ধরা পড়েছে। সে মাদকাসক্ত। সে কখনোই এ কাজ করার কথা না, যদি না নেপথ্যে কেউ তাকে ইন্ধন না যোগায়। তারা কোনো ধর্মের নয়, তারা জাতির শত্রু। দুই বছর পর নির্বাচন। নির্বাচনের আগে আগে তারা এ কাজ করে। শেখ হাসিনার ১২ বছরের উন্নয়নকে ধ্বংস করতে তারা এ কাজটি করেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন কথা দিয়েছিলেন। সেটা তিনি ২০২০ সালের মধ্যে করে দেখিয়েছেন। আজকে উন্নত দেশের কাতারে এ দেশ পা ফেলেছে। চট্টগ্রাম নগরীকে এখন চেনাই যায় না। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, উন্নয়ন হয়েছে দেশজুড়ে। ২০৪১ সাল লাগবে না, উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে, তাতে এ দেশ ২০৩১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হবে।
সংলাপে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ এবং মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে হতাশা
পরবর্তী নিবন্ধআমার দোষ, শেষ বলে পারিনি : মাহমুদউল্লাহ