একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যই খুন হয় মিনহাজ

খুনি গ্রেপ্তার, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নে নিখোঁজ কিশোর মিনহাজ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রায় একমাস পর লাশ উদ্ধারের ঘটনার আদ্যোপান্ত বের করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। একইসাথে হত্যাকাণ্ডে জড়িত একমাত্র আসামি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা, মাটিচাপায় ব্যবহৃত কোদাল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন-চার্জারসহ বিভিন্ন আলামতও জব্দ করে পুলিশ। এতে লাশ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মূলত একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আশরাফ উদ্দিন ছোটন (১৯) ধারালো দা দিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করে মিনহাজকে। পরে তড়িঘড়ি করে করলা ক্ষেতে মাটি খুঁড়ে মরদেহ চাপা দেয় ছোটন একাই।
চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম সারওয়ার জানান, আসামি আশরাফ উদ্দিনের দেখানো মতে পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা ও কোদাল এবং আসামির হেফাজত থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এই সংক্রান্তে নিহত কিশোর মিনহাজের বাবা মোহাম্মদ ফোরকান বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিলে হত্যা মামলা রুজু করা হয়। তিনি আরো জানান, প্রায় একবছর আগে মহেশখালীর শাপলাপুরে ছাদেকের কাটা গ্রামের মিনহাজ উদ্দিন চকরিয়ার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার জনৈক মনছুর আলমের প্রজেক্টে মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেয়। ওই প্রজেক্টে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ছোট বমুর আবু তাহেরের ছেলে আশরাফ উদ্দিন ছোটন। সেই সুবাদে দুইজনের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এমনকি আশরাফ ইতোপূর্বে একাধিকবার মিনহাজের গ্রামের বাড়িতেও বেড়াতে যায়। প্রজেক্টে দুইজন নিয়মিত রাত্রিযাপনও করত। এরইমধ্যে মাসখানেক আগে বাবা ফোরকান ছেলে মিনহাজকে দেখতে এসে না পেয়ে প্রজেক্ট মালিক মনছুরের কাছে জানতে চান। মনছুর জানান, কিছু না বলে মিনহাজ পালিয়ে গেছে। এরপর থেকে ছেলেকে স্বজনদের ঘরে ও বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকেন।
চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার রাজীব চন্দ্র সরকার জানান, নিখোঁজের একমাস পর গত মঙ্গলবার ছেলে মিনহাজকে খুঁজতে ফের প্রজেক্টে যান বাবা ফোরকান। এ সময় করলা ক্ষেতের একপাশে নতুন মাটি খোঁড়া স্থান তার চোখে পড়ে। একটু কাছে গেলে সেখানে দেখতে পান পা সদৃশ কিছু একটা। তখনই বুঝতে পারেন ছেলেকে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এরপর গলিত লাশ উদ্ধার করে পরনে থাকা হাফ প্যান্ট দেখেই নিশ্চিত হন লাশটি তার ছেলের।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, লাশ উদ্ধারের পর বাবার সন্দেহ হওয়ায় আশরাফ উদ্দিন ছোটনকে আটক করা হয়। পরে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত খুলে বলে এবং হত্যায় ব্যবহৃত দা, কোদালও উদ্ধার করা হয় পুকুর থেকে। ওসি বলেন, লাশ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ। হত্যার শিকার মিনহাজের বাবা ফোরকান বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিলে মামলা রুজুর পর ছোটনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ছোটন হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমার নাগরিকের ‘ভুল’ তথ্যে ফেঁসে গেছেন টেকনাফের যুবক
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে