একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর হারানো টাকা উদ্ধার হলো যেভাবে

মামলা করেননি, নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নেন চালককে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

পুলিশের আন্তরিকতায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলামের দূরদর্শিতায় নিজের হারানো টাকা ফেরত পান তিনি। গত শুক্রবার পুলিশ টাকাসহ ব্যাগ উদ্ধার করে। তবে রবিউলের (২৩) টাকাসহ ব্যাগ উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। এই কাজে রবিউলের ভূমিকার প্রশংসা করেন পুলিশ।

জানা যায়, বিরানি নিয়ে ফুফুর বাসায় বেড়াতে যান রবিউল। নগরীর আগ্রাবাদের চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিসের সামনে থেকে একটি সিএনজি টেক্সি ভাড়া করেন বন্দর এলাকার মাইজপাড়া পর্যন্ত। গন্তব্যে পৌঁছে তিনি নেমে পড়েন টেক্সি থেকে। কিন্তু ভুলে গাড়িতে ফেলে আসেন মানিব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল ৬৩ হাজার ৫০০ টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। এতগুলো টাকা হারিয়ে হতভম্ব রবিউল শরণাপন্ন হন বন্দর থানার। পরে বন্দর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তিনি ফিরে পান তার টাকাসহ ব্যাগ। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে ফোনে পরিচয় দিয়ে রবিউল বলেন, তার টাকা হারানো গেছে। আমি বলি, আপনি যদি সিএনজি টেক্সির নম্বর বলতে পারেন, তবে আমাদের জন্য কাজটি সহজ হবে। তারপর রবিউল বলেন, আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এরপর আমি আমার মতো অনুসন্ধান শুরু করলে ৩০ মিনিট পর রবিউল নিজ থেকে টেক্সির একটি ভিডিও ফুটেজ আমাকে পাঠান। এতে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই আমরা টেক্সিটিকে শনাক্ত করে ড্রাইভার ও গাড়ির মালিককে খুঁজে পাই।

তিনি বলেন, এরপর টেক্সি চালককে জানানো হলে তিনি কোনো টাকা পাননি বলে জানান। পরে থানায় এনে পুলিশের টানা ৫ ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদের পর চালক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

ওসি সঞ্জয় বলেন, ওই চালক প্রথমে জানান, রবিউলকে নামিয়ে দেওয়ার পর তিনি আরও যাত্রী তুলেছেন গাড়িতে। হয়ত অন্য যাত্রীরা টাকাটা নিতে পারে। চালকের কথায় সন্দেহ হলে আমরা তাকে যে যে স্পটে যাত্রী ওঠানামা করিয়েছেন সবগুলোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। কিন্তু গাড়ির মালিক দাবি করেন, চালকের দেখানো গাড়িটি এই গাড়ি না। তাই আমাদের সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে চালক জানান, তিনি দুপুরে ভাত খাননি। তাই আমরা তার থেকে নম্বর নিয়ে তার ঘরে ফোন করে কথা বলি। কিন্তু চালকের পরিবার জানায়, তিনি দুপুরে ঘরে এসে ভাত খেয়েছেন। এরপর চালকের কথা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর নিজ ঘরে ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা লুকানো আছে বলে স্বীকার করেন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও অন্য ১০ জন থেকে আলাদা রবিউল। তাৎক্ষণিক বুদ্ধি অনেক বেশি। নিজের অক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য নিজ উদ্যোগেই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এছাড়া সিএনজি চালক টাকাগুলো চুরির চেষ্টা করার পরও থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করার কথা বলা হলেও নিজ জিম্মায় ড্রাইভারকে ছাড়িয়ে নেন রবিউল।

রবিউলের এমন আচরণে মুগ্ধ ওসি সঞ্জয় বলেন, তিনি শুধু একজন ট্যালেন্ট স্টুডেন্ট না, একজন বড় মনের মানুষও। না হয় এত বড় একটা ক্ষতি যে লোকটা করতে চেয়েছিল, তাকে শাস্তি না দিয়ে নিজের জিম্মায় মুক্ত করতেন না। দৃষ্টিশক্তি থাকলেও আমরা অনেকেই রবিউলের চেয়ে কম দেখি। তিনি চোখ দিয়ে নয়, জ্ঞান দিয়ে দেখছেন পৃথিবী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানির নিচে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাপানের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ