একই সিরিয়ালে জাহাজ চালানো নিয়ে সংশয়

বাথিং বৈঠকে যায়নি আইভোয়াক, পিও এমএমডির নতুন সার্কুলার

হাসান আকবর | বুধবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে নেয়া সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত দুদিন ধরে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে একই সিরিয়াল অনুসরণ করে জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তবে বিবদমান দুই গ্রুপের এক পক্ষ ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) তাতে যোগ দেয়নি। অপরদিকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) পক্ষ থেকে বার্থিং বৈঠকে যোগ দিয়ে ৬টি জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছে। আইভোয়াক এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পিও এমএমডি গতকাল নতুন করে একটি সার্কুলার জারি করেছেন। বাইরে থেকে আসা বিদেশি জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসে কোন কোন লাইটারেজ জাহাজ নিয়োজিত হচ্ছে আজ বুধবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে নৌ বাণিজ্য দফতরকে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ১৮শ লাইটারেজ জাহাজের চলাচল দীর্ঘদিন ধরে ডব্লিউটিসি নিয়ন্ত্রণ করছিল। লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (কোয়াব) ও ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাংয়ের (আইভোয়াক) সমন্বয়ে ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়। ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়ে জাহাজ বরাদ্দ এবং পরিচালনা করে আসার ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দেয়। সাড়ে ৬শ কোটি টাকা আটকে ফেলার একটি বিষয় সামনে আসে। এই টাকা পরিশোধ করা না হলে ডব্লিউটিসি একাধিক জাহাজ মালিককে (একইসাথে পণ্যের এজেন্ট) জাহাজ বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিরোধ বাড়লে আইভোয়াক ডব্লিউটিসি থেকে বের হয়ে আলাদা সেল গঠন করে এবং জাহাজ বরাদ্দ প্রদান ও পরিচালনা করতে শুরু করে।

আইভোয়াকের পক্ষ থেকে ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। জাহাজ মালিকদের বিরোধ এবং দুটি পৃথক সেল থেকে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কা থেকে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জানুয়ারি থেকে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু প্রথম দিন আইভোয়াকের পক্ষ থেকে কোনো জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গতকাল দ্বিতীয় দিনেও আইভোয়াকের পক্ষ থেকে কেউ বার্থিং মিটিংয়ে যায়নি, জাহাজও বরাদ্দ দেয়নি। অপরদিকে ডব্লিউটিসির সদস্যদের পক্ষ থেকে বার্থিং সভায় যোগ দিয়ে ৬টি জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়। মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে একই সিরিয়ালে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার বৈঠকে না গেলেও আইভোয়াকের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে জাহাজ বরাদ্দ দিয়ে চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পিও এমএমডি কার্যালয়ে গতকাল আলোচনা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যারা জাহাজ পরিচালনা করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেলগুলোতে কোন কোন লাইটারেজ জাহাজ পণ্য খালাস করতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পিও এমএমডি গতকাল নতুন সার্কুলার জারি করেছেন। এতে প্রতিটি শিপিং এজেন্টকে একটি নির্দিষ্ট ছক তৈরি করে দিয়ে বলা হয়েছে, মাদার ভ্যাসেলে কোন কোন লাইটারেজ জাহাজ পণ্য খালাস করছে তা প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে পিও এমএমডিকে জানাতে হবে।

ডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গতকাল ৬টি জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে জাহাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, আমরা আজকের বার্থিং সভায় যেতে পারিনি। আমাদের কয়েকজন নেতা দেশের বাইরে রয়েছেন। তারা ফিরে আসার পর সদস্যদের সাথে বৈঠক করব। এরপর পিও এমএমডির সঙ্গে বৈঠক করব। বৈঠকে আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার করব। আমরা কখন থেকে একই সিরিয়ালে যেতে পারব সেটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন আমরা আমাদের মতো জাহাজ ম্যানেজ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের উন্নয়নে নাগরিক সমাজের সহায়তা চাইলেন মেয়র