এই অসময়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা যথার্থ হবে না

| মঙ্গলবার , ২৪ মে, ২০২২ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে বিভিন্ন মহল প্রত্যাখ্যান করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দাম বাড়ানো হলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বলা বাহুল্য, বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এই সুপারিশ ও গণশুনানির ভিত্তিতে কমিশন দাম বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য। পিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কারিগরি কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, ভোক্তা পর্যায়ে দাম না বাড়ালে পাইকারি মূল্যহার কার্যকর করা সম্ভব হবে না। বিইআরসির কারিগরি কমিটি যে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, তা জানানো হয় গত বুধবার কমিশন আয়োজিত গণশুনানিতে। এর আগে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে বুধবারের গণশুনানিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ও সুপারিশ তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতা ও প্রতিনিধিরা গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কী কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা তুলে ধরেন। করোনাকালে আয় কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ে কতটা চাপ ফেলবে, তা তুলে ধরেন ভোক্তা অধিকার প্রতিনিধিরা।

গত শনিবার ঢাকার মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য স্পষ্ট করেছেন। মহামারী আর ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তার মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়ার সঙ্কটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, পরিবহন ব্যয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দাম বৃদ্ধির এখন সঠিক সময় না। অন্তত ছয় মাস সময় নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এখন দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দেশীয় শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

শিল্প রক্ষায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে সিদ্ধান্তটি আমলাদের পরিবর্তে রাজনীতিকদের মাধ্যমে নিতে আহ্বান জানায় ব্যবসায়ী সংগঠনটি। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আগামী ২০ বছরে কোন সালে কত হারে বাড়ানো হবে, তার একটি আগাম পরিকল্পনা সরকারের কাছে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জসিম উদ্দীন বলেন, তাহলে ব্যবসায়ী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারবেন। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চেয়ে বলা হয়, এ খাতের বিরাজমান অব্যবস্থাপনার ‘অহেতুক দায়ভার’ জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবন জীবিকার উপর সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।

পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনার অপঘাতে বহুসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যও বেশ আগে থেকেই আকাশচুম্বী। নতুন ভাইরাসের মাধ্যমে করোনার প্রত্যাবর্তন হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সার্বিক জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে-তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তখন টাকার ক্রয়ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যে কমে যাবে। দেখা দেবে মূল্যস্ফীতি। চাল-ডাল-আটা থেকে অধিকাংশ পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

এমনিতেই বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। নানা কারণে নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বলা যায়, খেটে খাওয়া মানুষ বর্তমানে নিদারুণ দুর্ভোগের শিকার। এরই মধ্যে যদি আবার এসব পণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে এই চাপ তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। এই অসময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা যথার্থ হবে না। জনবান্ধব সরকার হিসেবে বিবেচিত এ সরকার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না বলে সকলের বিশ্বাস রয়েছে। আমরা চাই, সরকার এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে