উন্মুক্ত নালাগুলো মৃত্যুকূপ

চার মাসে চার প্রাণহানি, অনেকের মতে ‘এসব ঘটনা স্রেফ মার্ডার’

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর অরক্ষিত খাল ও নালার পাশে ব্যারিয়ার দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। উন্মুক্ত নালাগুলোতে স্ল্যাব বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও সেই কাজ শুরু হয়নি। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরীতে খাল এবং নালাগুলো মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে। মাত্র চার মাসে চারজনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা নগরবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টিকে দুর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ নগরবাসী। তারা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা স্রেফ মার্ডার। এই দায় কেউ এড়াতে পারেন না। যেভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে তাতে এরপর দুর্ভাগ্য কার, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নগরীর বহু খালেরই কোন অস্তিত্ব নেই। বহু খালই দখল হয়ে গেছে। খাল-নালা হয়ে গেছে সংকীর্ণ। নগরীর অধিকাংশ নালা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বেহাল অবস্থায় থাকা এসব খাল-নালায় একের পর এক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে নালায় পড়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের কোন হদিশ একমাসেও মেলেনি। সালেহ আহমদ যেদিন নালায় পড়ে নিখোঁজ হন, ওইদিনই সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, উন্মুক্ত খাল ও নালা স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও নগরীর অন্যান্য স্থান তো দূরের কথা মুরাদপুরের সেই দুর্ঘটনাস্থলেও ব্যারিয়ার নির্মিত হয়নি। রশি দিয়ে ঘিরে স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
নগরীর কয়েকশ’ কিলোমিটার খাল, নালা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় এসব খাল-নালা একাকার হয়ে যায়। গত ৩০ জুন চশমা খালে যাত্রীবোঝাই সিএনজি টেক্সি পড়ে দুইজন নিহত হয়। এরপর ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ নিখোঁজ হন। তার লাশ পাওয়ার জন্য যখন পরিবার আকুতি জানাচ্ছে তখনি গত সোমবার রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া। এর আগে মোহাম্মদ আলী রোডে নালায় পড়ে মারা গিয়েছিলেন একজন। গত বছর হালিশহর ইসলামিয়া ব্রিক ফিল্ড এলাকায় মহেশখালে পড়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়। শহরের বুকে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী। তাঁরা বলেছেন, কোন বাসযোগ্য শহরে এভাবে নালায় পড়ে এভাবে একের পর এক মৃত্যু হতে পারে না। এটি মেনে নেয়া যায় না।
মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম নামের আগ্রাবাদের একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি কোন শহর হলো? রাস্তা নেই, ঘাট নেই। নালাগুলো ভরাট হয়ে আছে। অথচ সেই ভরাট নালাগুলোই এক একটি মৃত্যুকূপ হয়ে উঠেছে। তরতাজা মানুষ নালায় পড়ছে, মরে যাচ্ছে। কারো কী কোন দায় নেই? এভাবে আর কত মানুষের জীবন গেলে কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে?
আসমা বেগম নামের একজন গৃহিণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
সুজন ঘোষ নামের একজন বললেন, এটি স্রেফ মার্ডার। এভাবে একের পর এক মানুষকে খুন করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় মামলা করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ ঘটনার দায় কার?
পরবর্তী নিবন্ধকী কষ্টের এই চলে যাওয়া