এ ঘটনার দায় কার?

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কেবল দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন করেন নাগরিক ও নগর পরিকল্পনাবিদগণ। অফলাইন-অনলাইন সবখানেই একটি প্রশ্ন, দুর্ঘটনার দায় কার? প্রশ্নবাণে নাড়িয়ে দেন নগররক্ষকদের চেয়ারও।
অবশ্য এক পক্ষ বলেন, নগরপিতার অবহেলা। তখনি অন্য পক্ষ দোষ চাপায় সিডিএ চেয়ারম্যানের ঘাড়ে। অভিযুক্ত হন ওয়াসাসহ অন্য সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানরাও। মাঝে মাঝে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর পদস্থরাও অংশ নেন দোষ চাপানোর এ সংস্কৃতিতে। বাদ যান না সেখানে দায়িত্ব পালনকারী সাবেকরাও। সুযোগ পেয়ে তারাও নগরবাসীর কাতারে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন, দায় কার?
যদিও শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে না। হয় না সমাধানও। সময়ের স্রোতে মানুষও ভুলে যান প্রশ্ন করতে। আবার কোনো ঘটনা দুর্ঘটনায় নতুন করে সামনে আসে পুরনো সেই প্রশ্ন, দায় কার? যেমন গত সোমবার দিবাগত রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়ার মৃত্যুর পর একই প্রশ্ন করছেন সবাই। অথচ এক মাস আগে ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে নালায় পড়ে ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের নিখোঁজের পরও একই প্রশ্নের ঝড়ে কেঁপেছিল শহর চট্টগ্রাম।
প্রসঙ্গত, নগরে গত চার মাসে তিনটি দুর্ঘটনায় মারা যান চারজন। আহত হয়েছেন একাধিক। প্রতি দুর্ঘটনার পর ছিল একই প্রশ্ন, দায় কার?
সর্বশেষ দুটি ঘটনার জন্য অর্থাৎ সাদিয়া ও সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পর পরষ্পরকে দায়ী করেছে সিটি কর্র্পোরেশন ও সিডিএ। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আগ্রাবাদে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে সিডিএ। তাই সেখানে মেইনটেনেন্সসহ অন্যান্য দায়িত্ব তাদের। ড্রেনে ময়লা আছে, কিন্তু ড্রেনের পাশে ঘেরা ছিল না, রেলিং ছিল না, সেগুলো থাকলে তো দুর্ঘটনাটা ঘটত না। ঘেরাও না দেওয়ার জন্য সিডিএকে দায়ী করেছেন মেয়র।
অবশ্য সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ আজাদীকে বলেন, তারা (চসিক) নালা পরিষ্কার করবে না, আবার কিছু ঘটলেই সিডিএর দোষ দেয়। সিডিএর দোষ ধরা ছাড়া মনে হয় সিটি কর্পোরেশনের আর কোনো কাজ নাই। তারা ভালোমতো নালা পরিষ্কার করলে দুর্ঘটনা ঘটত না।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, আমরা মাত্র গত দুই বছর ধরে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছি। তার মানে কি আমরা ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছি? সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজও নাই। সিটি কর্পোরেশন ময়লা পরিষ্কার করে না কেন? যেখানে প্রতি মাসে একবার পরিষ্কার করা দরকার সেখানে বছরেও একবার করে না। তিনি বলেন, আগ্রাবাদে কোনো স্ল্যাবই ছিল না। আমরাই স্ল্যাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। ড্রেনে হয় মানুষ পড়ে, নয়তো গাড়ি। গত ৩০ বছর ধরে এটা চলে আসছে। তখন তো সিডিএর খালের প্রজেক্ট ছিল না। তখন তারা খাল-নালায় কোনো ব্যারিয়ার দেয়নি কেন?
চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লিখেন, কিছুদিন পূর্বে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ নামক এক ব্যবসায়ী। বাদামতলীতে নালায় পড়ে অকালে প্রাণ হারান শেহেরীন মাহবুব সাদিয়া নামে এক মেধাবী ছাত্রী। এ দায় কার? সেখানে বোরহান উদ্দিন গিফারী নামে একজন কমেন্ট করেন, চসিক ও সিডিএর।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী আজাদীকে বলেন, যারা ড্রেন বা ম্যানহোল খোলা রাখছে তারাই দায়ী। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাজ কি? যারা পরিচ্ছন্ন কাজে জড়িত তাদের কাজ কি? তারা মনিটরিং করে না কেন? এক সংস্থাকে অন্য সংস্থার দোষারোপ করাকে কৌশল অবিহিত করে তিনি বলেন, সিডিএ বলছে ময়লা সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার করেনি। আবার সিটি কর্পোরেশন সিডিএকে দায়ী করছে। অথচ পরোক্ষভাবে দুই প্রতিষ্ঠানই দায়ী। তাদেরকে অবশ্যই দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। এ দুই প্রতিষ্ঠানের যারা প্রধান, যারা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু হওয়া উচিত। তাদের আইনের আওতায় আনা গেলে ভবিষ্যতে তারা নাগরিক জীবন নিয়ে যা খুশি তা করতে পারবেন না। মামলা হয়ে গেলে তখন ইনভেস্টিগেশন অথরিটি ঠিক করবে কে দায়ী। তদন্তে যে দায়ী প্রমাণিত হবে তাদের বিচার হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কোনো দুর্ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ বা ওয়াসা যে কারো দায় থাকতে পারে। তাদের খামখেয়ালীপনার জন্যই বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই তারা দায় এড়াতে পারে না। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে গিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন। এর বাইরে একজন নাগরিকও চাইলে উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমন ঘটনা ঘটলে শহর বাসযোগ্য হয় কীভাবে : আশিক ইমরান
পরবর্তী নিবন্ধউন্মুক্ত নালাগুলো মৃত্যুকূপ