কী কষ্টের এই চলে যাওয়া

নিখোঁজের ৫ ঘণ্টা পর ভার্সিটি ছাত্রীর লাশ উদ্ধার যে কারণে মর্মান্তিক এ ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মামা ও নানার সাথে হাসি মুখে বাসায় ফিরছিলেন ভার্সিটি পড়ুয়া শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (১৯)। হঠাৎ পা পিছলে নালায় পড়ে গেলেন সাদিয়া। সেই যে পড়ে গেলেন, জীবন নিয়ে ওঠা আর হলো না। ওঠানো হলো সাদিয়াকে, তবে জীবন্ত নয়, তখন তিনি লাশ। লাশ হয়েই ফিরলেন। তরতাজা প্রাণ, স্বপ্নে ভরপুর। স্বপ্ন ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। অকস্মাৎ অভাবিত এই চলে যাওয়া, কী কষ্টের এই যাওয়া! তাই মানতে পারছে না স্বজনরা। মানতে পারছেন না নগরবাসীও। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫ ঘণ্টার অভিযানে রাত ২টা ৫০ মিনিটে তরুণীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উত্তর হালিশহরের মইন্যাপাড়ায় জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাদিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন। একটি প্রাণ অকালে ঝরে পড়ায় সমালোচনা হচ্ছে। এসেছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামা ও নানার সাথে আগ্রাবাদের শাহজালাল চশমা মার্কেটে চশমা কিনতে গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার পথে বাদামতলী মাজার গেটের সামনে প্রাইম ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাত ১০টার দিকে পা পিছলে খোলা নালায় পড়ে যান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে কোনো সড়কবাতি ছিল না। দুর্ঘটনার সময় ওই স্থানটি ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার জন্য রাস্তার ওই পাশটি সম্প্রসারণ করে ফুটপাত সংকুচিত করে রাখা হয়। এতে নালার উপরে ফুটপাতের অংশ সরু হয়ে যায়। অন্ধকারে সরু ফুটপাত দিয়ে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন সাদিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী আলাউদ্দিন বলেন, রবি অফিসের সামনে থেকে মাজার গেট পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকারের মধ্যে সরু ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ড্রেনে পড়ে গেছেন তরুণী। এদিকে সাদিয়া নালায় পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার মামাও লাফ দেন। কিন্তু এর আগেই পানির তোড়ে আবর্জনার নিচে পানিতে তলিয়ে যান সাদিয়া। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তাদের সাথে যোগ দেন স্থানীয় লোকজনও। সোয়া ১০টা থেকে অভিযান শুরু হলেও আবর্জনার কারণে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। পরে স্কেভেটর এনে কালভার্টের উপরের স্ল্যাব তুলে ফেলার পাশাপাশি আবর্জনা সরানো শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। পরে ধীরে ধীরে পানির উপরের আবর্জনা সরানোর পর লাশের সন্ধান পান ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক শামীম আহসান চৌধুরী বলেন, আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকার ড্রেনটি অনেক পুরনো। ওই ড্রেনে একজন তরুণী পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। উদ্ধার অভিযানে ১৫ জনের ডুবুরি টিমসহ ফায়ার সার্ভিসের ২০ সদস্য অংশ নেয়। রাত ২টা ৫০ মিনিটে আমরা তরুণীর লাশ উদ্ধার করি। তিনি বলেন, ড্রেনটি ৮-১০ ফুট গভীর ছিল। পানির স্রোতের কারণে পড়া মাত্রই আবর্জনার নিচের পানিতে ওই তরুণী তলিয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্মুক্ত নালাগুলো মৃত্যুকূপ
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা শতায়ু হলে দেশ আরো উন্নত হবে