উইমেন ডেলিভার ২০২৩ সম্মেলন: বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব

উম্মে সালমা | শনিবার , ৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

জেন্ডার সমতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিবেদিত বিশ্বের বৃহত্তম বহুমাত্রিক সম্মেলনগুলির একটি হলো উইমেন ডেলিভার ২০২৩, যা এবছরের জুলাই মাসে আফ্রিকার রুয়ান্ডার কিগালি শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বিশাল এই আয়োজনে ছয় হাজার তিনশ জন প্রতিনিধি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং আরও প্রায় দুই লক্ষ দর্শক অনলাইনে অংশগ্রহণ করে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জেন্ডার বা লিঙ্গ সমতা অর্জনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।

সম্মেলনটি সারা বিশ্বের তরুণদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা যেসব নীতি এবং কাম্য সমাধানসমূহকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সেটার পক্ষেই সমর্থন জানান। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য তরুণ নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন, যারা প্রত্যেকেই একটি করে সেশন পরিচালনা করেছিলেন এবং গ্লোবাল সাউথের (আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, ওশেনিয়া এবং এশিয়ার তরুণদের সামাজিক জোট) প্রতিনিধিত্ব করে প্রাণবন্ত আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। ফিরে এসে তারা, সম্মেলন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাসমূহ ব্যক্ত করেছেন। আমরা এখন সেসবেরই একটু নির্যাস নেব।

সোশ্যাল এন্ট্রপ্রিনিউরশিপ এন্ড একটিভিজম’ পুরস্কার বিজয়ী, নওশীন মেহজাবিন চৌধুরী তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘‘বিশ্বমঞ্চের এমন একটি আসরে, এই অবস্থানে পৌঁছানো, নিজের কথা ব্যক্ত করতে পারা এবং হাজারো মানুষ আমার কথা শুনছেএটি এক কথায়, অনন্য, অবিশ্বাস্য, দারুণ শক্তিশালী। বিষয়টি সম্ভাবনায় পূর্ণ একটি শহরের মধ্যে দিয়ে হাঁটার মতো ছিল যেখানে প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য রয়েছে এবং সকলের জন্য সমতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে সবাইই কাজ করছে।’’ নওশীন মেহজাবিন ‘ইউএসএআইডি এবং এফএইচআই থ্রি সিক্সটি এইচআইভি’ প্রতিরোধ বিষয়ক অধিবেশনে ‘কিশোরী ও তরুণীদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তর’ শীর্ষক যুবনেতৃত্বাধীন শ্রমবাজার মূল্যায়ন এবং কিশোরী ও তরুণীদের জন্য কমিউনিটি মেন্টরিং নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তার আলোচনায় বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে এবং নীতিনির্ধারণে তরুণদের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দেয় এমন দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে আওয়াজ তোলার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে অনুভব করার আহ্বান জানান।

তানজিলা মজুমদার দৃষ্টি, যিনি বর্তমানে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল লিড ফর এশিয়া হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়নে এক দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে উইমেন ডেলিভার ২০২৩এ যোগ দিয়েছিলেন। তিনি সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারদের সাথে কার্যকর অংশগ্রহণে সহসৃষ্টির মাধ্যমে জনমুক্তির পক্ষে আলোচনা করেন। সম্মেলনের তিনি গ্লোবাল সাউথের ‘স্কুল থেকে ঝরে পড়া মেয়েদের জন্য রূপান্তরমূলক শিক্ষা পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি প্যানেলের সভাপতিত্ব করেন। গ্লোবাল সাউথের মেয়েদের যে কম বয়সে বিয়ে, সন্তানের জন্ম দান এবং দারিদ্র্যতার মতো সমস্যার কারণে শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তানজিলার সেশনে সেসব নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

সম্মেলনে যোগদানকারী আরেক বাংলাদেশি এমডি সোহানুর রহমান একজন জলবায়ুকর্মী এবং আইনজীবী। বাংলাদেশের পরিবেশগত ন্যায়বিচার আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। বিপদাপন্ন যুব সমাজ এবং গ্রামীণ বাংলাদেশের আন্তঃলিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার সমপ্রদায়ের সাথে যে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন তা তাকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে লড়াই করার এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে উন্নীত করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত করেছে।

সোহানুর তার ‘স্পেসেস, সলিডারিটি এন্ড সলিউশনস’ শীর্ষক একটি প্যানেলে স্থানীয় উদ্যোগ এবং নীতি সম্পর্কে কথা বলেছেন। প্যানেলের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের বৈষম্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং কীভাবে নানা সামাজিক দুর্যোগ সেই সমপ্রদায়সমূহকে প্রভাবিত করে যারা ইতিমধ্যে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। যাদের বলার আছে অনেক কিছুই কিন্তু বলার মতো ভাষা নেই, তাদের কণ্ঠ তুলে ধরার মানে হলো তাদের বিকাশে সহায়তা করা এবং নীতি নির্ধারণে ও সমাধানে সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করা, এমনটাই সোহানুর মনে করেন।

গ্লোবাল সাউথের মেয়েদের জন্য উদ্ভাবনী শিক্ষামূলক কৌশলের ওপর সম্মেলনের জোর দেওয়ার বিষয়টি তানজিলাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি মনে করেন, উইমেন ডেলিভার সম্মেলনের এই শক্তি বাংলাদেশের নারী প্রগতিকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, ‘‘একটি সম্মেলন সবকিছুর সমাধান নাও হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ এখন আর ঔপনিবেশিক ভাবধারার তলাহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ তার নিজস্ব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার গল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’’

এবারের উইমেন ডেলিভার ২০২৩ ছিল একটি যুগান্তকারী সম্মেলন যা পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার শতমুখে প্রচার করেছে। এটি একটি রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা যা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করেছে, তারা বিশ্বাস করে যে এই অর্জনসমূহ বাংলাদেশী তরুণদের একটি কণ্ঠস্বর এবং দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে। আর তাই তানজিলা, সোহানুর এবং নওশীন আগামীতে তরুণদের মধ্যে উদাহরণ হিসাবে কাজ করবে এই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করতেই পারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোডমার্চে বাবার ছবি দেখে বিষপান করা ছাত্রলীগ নেতার পাশে তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিক